রাজনৈতিক ব্যর্থতায় পাকিস্তান ভেঙেছে : পাক সেনাপ্রধান

SHARE

পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া । তিনি বলেছেন, বেশিরভাগ মানুষ এই বিষয়টি এড়িয়ে যান।
১৯৬৫ সালের যুদ্ধে নিহত সেনাদের আত্মত্যাগ স্মরণে বুধবার রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে (জিএইচকিউ) আয়োজিত প্রতিরক্ষা ও শহীদ দিবস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেনারেল বাজওয়া। সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ‘গৃহযুদ্ধে’ সেনাবাহিনীর অবস্থান নিয়েও কথা বলেন।
জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘আমি কিছু তথ্য সংশোধন করতে চাই। প্রথমত, সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ছিল রাজনৈতিক ব্যর্থতা, সামরিক ব্যর্থতা নয়।
‘যুদ্ধরত সেনার সংখ্যা ৯২ হাজার ছিল না। যুদ্ধ করেছে ৩৪ হাজার সেনা। বাকিরা ছিল বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের লোকজন। এই ৩৪ হাজার সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২ লাখ ৫০ হাজার সদস্য এবং মুক্তিবাহিনীর ২ লাখ যোদ্ধার মুখোমুখি হয়েছিল।
‘এই কঠিন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে। ত্যাগ স্বীকার করেছে; যা ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল মানেকশ স্বীকার করেছেন।’
জাতি এখনও এই ত্যাগকে যথেষ্ট সম্মান জানাতে পারেনি দাবি করে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বাজওয়া বলেন, ‘এটা অবিচার। আজকের আয়োজনে বক্তব্য রাখার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি এই শহীদদের অভিবাদন জানাই। এটা অব্যাহত থাকবে। তারা আমাদের নায়ক। তাদের নিয়ে জাতির গর্ব করা উচিত।’
ছয় বছর ধরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন জেনারেল বাজওয়া। ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন তিনি।
২০১৬ সালে তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন বাজওয়া। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তার মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ে।

সেনাপ্রধান হিসেবে জনগণের উদ্দেশে নিজের শেষ ভাষণের একটি বড় অংশে ছিল রাজনৈতিক ইস্যু।
জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘আমি প্রায় অবাক হই। ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তারপরও তারা নিজেদের জনগণের কাছে কদাচিৎ সমালোচিত হয়।
‘বিপরীতে, আমাদের সেনাবাহিনী যারা দিন-রাত দেশ সেবায় ব্যস্ত থাকে, তারা প্রায়শই সমালোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এর একটি বড় কারণ গত ৭০ বছর ধরে রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ, যা অসাংবিধানিক।
‘এ কারণেই গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে তারা কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে আমরা এই বিষয়ে কঠোরভাবে অনড় থাকব।’
অহং পাশ কাটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সেনাপ্রধান বাজওয়া।
তিনি বলেন, ‘দেশ গুরুতর অর্থনৈতিক হুমকিতে রয়েছে। এই অবস্থা থেকে কোনো রাজনৈতিক দল দেশকে বের করতে পারবে না।
‘আসলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাধ্যতামূলক। সময় এসেছে সব রাজনৈতিক দলের নিজেদের অহংকে দূরে সরিয়ে রাখার। তাদের উচিত অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।’
জয়-পরাজয় রাজনীতির অংশ উল্লেখ করে বাজওয়া আরও বলেন, ‘প্রতিটি দলকে জয়-পরাজয় মেনে নেয়ার শক্তি অর্জন করতে হবে। অসহিষ্ণুতা কিংবা আমি মানি না’… এমন মনোভাব থেকে বের হতে হবে।’