আ.লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় সুফল পাচ্ছে জনগণ : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় জনগণ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে একটানা সরকারে থাকায় উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও দৃশ্যমান হয়েছে, মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের তালিকায় নাম লেখাবে বাংলাদেশ। উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতি কেউ থামাতে পারবে না।
আজ মঙ্গলবার ‘দুর্ঘটনা-দুর্যোগ হ্রাস করি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সারা দেশে শুরু হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন। মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বীরত্বপূর্ণ অবদানের চারটি ক্যাটাগরিতে ৪৫ জন ফায়ার ফাইটারকে পদক দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পদক হস্তান্তর করছেন।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের ‘উন্নয়নের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ’ হয়ে গেছে বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে এখন থেকে সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বানও জানান সরকারপ্রধান। তাই যার যেখানে সম্ভব অল্প পরিমাণে হলেও খাদ্য উৎপাদনের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমাদের উন্নয়নের গতিটা কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে গেছে। কারণ, একদিকে করোনাভাইরাসের অভিঘাত, অপরদিকে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন। যার ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এই মন্দা মোকাবিলার জন্য এখন থেকে আমাদেরও প্রস্তুতি নিতে হবে।
‘এজন্য আমি আহ্বান করেছি, যার যেখানে কর্মস্থান, সারা বাংলাদেশে এত আমরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করে দিয়েছি, প্রত্যেকে যার যার যেখানে জমি আছে, যা পারেন তরকারি, ফলমূল যা পারেন, আপনারা বৃক্ষরোপণ করবেন, প্রতিটি জায়গায় কিছু না কিছু উৎপাদন করবেন। নিজেদের যে চাহিদা পূরণ করবার, নিজেরাই চেষ্টা করবেন। বিশ্বের এই মন্দার ধাক্কাটা যেন আমাদের দেশে না পড়ে। তার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য গতির এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না বলে বিশ্বাস করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষায়-দীক্ষায় উন্নত হবে, সেই লক্ষ্য ইনশাল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব।’
উন্নয়নকে একটি ‘ধারাবাহিক ও চলমান প্রক্রিয়া’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার একটানা ক্ষমতায় আছে বলে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে, দেশের মানুষ তার সুফল পাচ্ছে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই মর্যাদাটাকে বাস্তবায়ন করা, ধরে রাখা এবং এ মর্যাদা নিয়ে আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, এটাই আমাদের প্রত্যয় এবং লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ‘এ ধারাবাহিকতায় আমি মনে করি যেকোনো ঝুঁকি হ্রাস করা, মানুষের নিরাপত্তা দেয়া, সেই সঙ্গে উন্নয়নের কাজগুলো দ্রুত, ত্বরান্বিত করা, মানসম্মত করা। এটাই হচ্ছে আমাদের সবার প্রচেষ্টা। কাজেই আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাক। দেশ যত এগিয়ে যাবে, এদেশের মানুষ তত ভালো থাকবে।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের আজীবন রেশন সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি সারাজীবন আগুন-ধোঁয়ায় কাজ করতে হয় বিধায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অবসর বয়সে নানা রকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যায়। এ কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আজীবন রেশন প্রদানের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। আমরা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩০ হাজারে উন্নীত করার কাজও হাতে নেয়া হয়েছে।’
যে কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে সবসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে যান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই তাদের আরও যুগপোযোগী করা এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। আর সেই পদক্ষেপটা আমরা নিয়েছি। এর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এবং সেবার ক্ষেত্রটা আরও সম্প্রসারণ করার বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। ফায়ার সার্ভিস সম্পূর্ণ সক্ষমতার এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যাতে রূপান্তরিত হয়, সেই ব্যবস্থাই আমরা গ্রহণ করেছি।’
প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণের যে ঘোষণা সরকার দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, যারা এ কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন তারা যেন উন্নতমানের প্রশিক্ষণ পান। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফায়ার অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করবার উদ্যোগ নিয়েছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১ হাজার ১৮৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশে পাঠিয়ে পেশাগত বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের জনবল ৬ হাজার ১৭৫ জন থেকে বৃদ্ধি করে ১৪ হাজার ৪৪৩ জনে উন্নীত করেছি। ফায়ার স্টেশন এখন ৪৯১টি। আরও ৫২টি নতুন স্টেশন চালু হবে।’
সেবার সক্ষমতা বাড়াতে ফায়ার সার্ভিসের বহরে বিভিন্ন উচ্চতার মই সম্বলিত ২৬টি গাড়ি যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতা ৬৮ মিটারের ল্যাডার সম্বলিত টিটিএল গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যোগ হয়েছে। ৬৮ মিটারের ৫টি গাড়ি কেনা হয়েছে।’
এই অর্থবছরে আরও কিছু আধুনিক যন্ত্র কেনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করে ট্রান্সজেন্ডারদেরও যাতে নিয়োগ দেয়া যায় সেজন্য ‘ফায়ারম্যান’ পদের নাম পরিবর্তন করে ‘ফায়ার ফাইটার’ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কারণে ফায়ার ফাইটারদের মনোবল ও সক্ষমতা বেড়েছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের কল্যাণ করা, মানুষকে উদ্ধার করা-একটা মহৎ কাজে তারা নিয়োজিত রয়েছেন। কাজেই ফায়ার সার্ভিসের প্রতি সদস্য দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবেই মানুষের কাছে প্রতীয়মান।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টে আমরা ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছি। আমি মনে করি যেহেতু সংখ্যা বেড়ে গেছে এখানে আরও ২০ কোটি টাকা আমি অনুদান দেব।’
তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৭টি অগ্নি দুর্ঘটনায় অংশ নিয়ে ১৬ হাজার ৩০৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। এই সময়ের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৯টি অ্যাম্বুলেন্স কলের মাধ্যমে ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৯ জন রোগী হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহে কয়েকটি বিষয়ের গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো হলো:
১. জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা।
২. ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাজে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৩. ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করা।

অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের দেয়া হয় বিশেষ সম্মাননা পদক।
এবার চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ৪৫ জন কর্মী পেয়েছেন এই পদক। এদের মধ্যে ১০ জনকে দেয়া হয়েছে প্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক। এদের প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে এককালীন ৭৫ হাজার টাকা। আজীবন এক হাজার টাকা করে মাসিক ভাতাও পাবেন তারা।
প্রেসিডেন্ট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সেবা পদক দেয়া হয়েছে ১০ জনকে। এদের প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে এককালীন ৫০ হাজার টাকা। আজীবন এক হাজার টাকা করে মাসিক ভাতাও পাবেন তারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পদক দেয়া হয়েছে ১০ জনকে। এদের প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে এককালীন এক লাখ টাকা। আজীবন এক হাজার ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন তারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সেবা পদক পেয়েছেন ১৫ জন। এদের প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে এককালীন ৭৫ হাজার টাকা। তারা আজীবন এক হাজার ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন ।
৪৫ জনের মধ্যে ৩ কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের বিএম কন্টেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে জীবন বিসর্জন দেয়া ‘অগ্নিবীর’ খেতাব পাওয়া ১৩ শহীদ ফায়ার ফাইটারদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অগ্নি নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নি নির্বাপণে নানা কসরত দেখান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার ৬৮ মিটারে টিটিএল গাড়ি দিয়ে ২৪ তলা ভবনে অগ্নি নির্বাপণ কৌশলও উপস্থাপন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে। রিমোট কন্ট্রোল পরিচালিত লুপ-সিক্সটি দিয়ে কীভাবে আগুন নেভাতে হয়, সেটিও উঠে আসে ফায়ার সার্ভিসের প্রদর্শনীতে।