২০০ কোটি টাকা সরিয়েছে উল্কা গেমস : র‌্যাব

SHARE

গেইমিং ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের নামে ভুল তথ্য দিয়ে আইনি বৈধতা নেওয়া উল্কা গেমস লিমিটেড দেশ থেকে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরা থেকে এই চক্রের মূল হোতা উল্কা গেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জামিলুর রশিদসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের বরাতে র‌্যাব মুখপাত্র আরও জানান, পার্শ্ববর্তী দেশের মুনফ্রগ ল্যাবের সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশের কোটি কোটি টাকা সরিয়েছে উল্কা গেমস।
গেমিং উন্নয়নের উদ্দেশে শুরু হলেও উল্কা গেমস তা না করে তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে টাকা সরায় বলে জানান তিনি।
এর আগে রোববার রাতে জামিলুর রশিদ ছাড়া গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন সায়মন হোসেন, রিদোয়ান আহমেদ, রাকিবুল আলম, মুনতাকিম আহমেদ ও কায়েস উদ্দিন আহম্মেদ। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, সিপিইউ, সার্ভার স্টেশন, হার্ড ডিস্ক, স্ক্যানার, ডিভিডি ড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেভিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও নগদ টাকাসহ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
র‌্যাব জানয়, উল্কা গেমসের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জামিলুর রশিদের সঙ্গে ২০১৭ সালে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি প্রতিষ্ঠান মুনফ্রগ ল্যাবের পরিচয় হয়। ২০১৮ সালে তিনি মুনফ্রগ ল্যাবের বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেড় লাখের বেশি টাকা বেতনে নিযুক্ত হন।
মুনফ্রগ ল্যাবের অনলাইন জুয়া অ্যাপ ‘তিন পাত্তি গোল্ড’-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় গেমটিকে আরও ছড়িয়ে দিতে দেশে বৈধতা নিতে আইনজীবীদের পরামর্শে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে জামিরুল রশিদ ‘উল্কা গেমস প্রা. লি.’ নামে একটি গেমিং ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেন।

পরে ২০১৯ সালে মুনফ্রগের শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ উল্কা গেমসকে দেওয়ার মাধ্যমে দেশে গেমিং খাতে উন্নয়নের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয়। দেশে গেইমিং খাতে উন্নয়নের অনুমোদন থাকলেও অনলাইন জুয়া বা ক্যাসিনোর অনুমোদন না থাকায় উল্কা গেমস বিভিন্ন ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আইনি বৈধতা নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
র‌্যাব বলছে, এভাবেই ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ যাত্রা শুরু করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। উল্কা গেমসের যাত্রা গেমিং উন্নয়নের উদ্দেশে হলেও তারা মূলত অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাঠানোর কাজ করছিল।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, উল্কা গেমসের যাত্রা গেমিং ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশে শুরু হলেও তারা মূলত গেম ডেভেলপমেন্ট না করে তিনপাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাঠানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। ‘তিনপাত্তি গোল্ড’ মূলত একটি অ্যাপ, যা মোবাইলে ডাউনলোড করে খেলা যায়। এই অ্যাপের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ মুনফ্রগ ল্যাবের কাছে। এই অ্যাপে ‘তিনপাত্তি গোল্ড’ ছাড়াও রাখি, আন্দর বাহার ও পোকার নামেও অনলাইন জুয়ার গেমস রয়েছে। যেকোনো কাজের পাশাপাশি এই গেম খেলতে পারায় তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এটি জনপ্রিয়তা পায়। রেজিস্ট্রেশনের পর একজন গ্রাহককে গেম খেলার জন্য কিছু চিপস ফ্রি দেওয়া হয়। পরে গেম খেলার জন্য অর্থের বিনিময়ে চিপস কিনতে করতে হয়। মূলত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে চিপস কেনার অর্থের লেনদেন হয়। জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৫০ হজার কোটি চিপস বিক্রি হয় এবং প্রতি কোটি চিপস বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৬-৬৫ টাকায় বিক্রি করা হয়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বট প্লেয়ার/রোবট প্লেয়ারের মাধ্যমে মূল গেমারদের কৌশলে হারিয়ে প্লেয়ারদের পরে আরও চিপস কিনতে উৎসাহিত করা হয়। বাংলাদেশে ‘তিনপাত্তি গোল্ড’ এর চিপস বিক্রির কাজটি ১৪টি অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর/এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এসব ডিস্ট্রিবিউটরদের সাব ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও প্রাইভেট টেবিল অপশনের মাধ্যমে অন্য প্লেয়ার থেকেও চিপস কেনা যায়। বর্তমানে ‘তিনপাত্তি গোল্ড’ এ প্রায় ৯ লাখ নিয়মিত গেমার রয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার চিপস বিক্রি হয় বলে জানা যায়।
র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, ভার্চুয়াল চিপস অর্থের বিনিময়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মূলত বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে চিপস বিক্রির টাকা ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে সংগ্রহ করা হতো। বর্তমানে উল্কা গেমসের চারটি অ্যাকাউন্টে ৮০ কোটির বেশি টাকা রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও গত দুই বছরে তারা মুনফ্রগ ল্যাবকে ব্যাংকের মাধ্যমে ২৯ কোটি টাকা দিয়েছে। উল্কা গেমসের মোট ৩৬ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী ছিল। বেতনসহ অফিস পরিচালনায় প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হতো। এছাড়াও কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বাৎসরিক বেতনের ৩০-৯০% হারে বোনাস দেওয়া হতো। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেশের বাইরে অনলাইন জুয়ার অর্থ পাঠানো হয়েছে।