মিতব্যয়ী হোন, বিদ্যুৎ সংকট সবসময় থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট সবসময় থাকবে না বলেও জানান তিনি।
বুধবার সকালে ২৪০০ মেগাওয়াট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) ইউনিট-২-এ রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল (আরপিভি) স্থাপন কাজ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে পাবনার ঈশ্বরদীতে আরএনপিপির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিতে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৩ সালে প্রথম ও ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে।’
রূপপুরের স্বচ্ছ বিদ্যুতে বদলে যাবে উত্তরের জনপদ। ২০২৩ সালে প্রথম এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। নিরাপত্তায় দেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব; এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে উত্তরের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাবে। পরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে বাংলাদেশ।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র না, আপনাদের এই কথা মনে রাখতে হবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার এই শক্তিটা… এর যে ব্যবহারটা এবং শান্তির জন্য ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের প্রথম ও ২০২৪ সালের মধ্যে ‍দ্বিতীয় ইউনিট চালুর প্রত্যাশা করছি আমরা। দুই ইউনিট থেকে ২৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ আসবে, আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষ যেখানে চিরদিন মঙ্গা লেগে থাকতো, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো। এই আশ্বিন-কার্তিক মাস আসলেই সেখানে দুর্ভিক্ষ হতো। সেখানে আমরা তো দুর্ভিক্ষ মুক্ত করেছিই। এখন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাদের আর্থসামাজিক আরও উন্নত হবে। এটা হলো বাস্তবতা। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা এ কাজগুলো করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, সবার জন্য বিদ্যুৎ। আমরা কিন্তু আমাদের কথা রেখেছি। বাংলাদেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পেরেছি এবং আমরা বাংলাদেশকে আলোকিত করতে পেরেছি। তবে বর্তমান বিশ্বে যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে, যুদ্ধাবস্থা, তার ওপর কোভিড এবং সমস্ত পরিবহন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মূল্যস্ফীতি; যার ফলে এখন উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। তারাও প্রতিটি ক্ষেত্রে সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে। আমরাও, বাংলাদেশ সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই। কারণ পৃথিবীটা এখন হচ্ছে একটা গ্লোবাল ভিলেজ। একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে সারা বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়, তার ধাক্কাটা কিন্তু আমাদের ওপরও এসে পড়ে। তাই আমাদের কিছু সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে, তার মানে এই না যে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না। মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে, পাবে। তবে এখানে সবাইকে একটু মিতব্যয়ী হতে হবে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হচ্ছে। আমরা বাধ্য হচ্ছি বর্তমান পরিস্থিতির কারণে। কারণ যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, তার ওপর স্যানকশন, এই স্যানকশন দেওয়ার ফলে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমি আশা করি, পৃথিবী এ রকম একটা অবস্থা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ।
এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান, রূপপুর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর। ঈশ্বরদীর জনপ্রতিনিধি, পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কেন্দ্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসাটম ও এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের কর্মকর্তারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের চুল্লি স্থাপনকাজের উদ্বোধন হয়। প্রথম ইউনিটের কাজের অগ্রগতি হয় ৭০ শতাংশ। এর এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের কাজ শুরু হলো আজ। প্রকল্পের ভৌত নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৫৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে উৎপাদন শুরু করা যাবে।
এ প্রকল্পে স্থাপন করা হলো রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বশেষ প্রযুক্তি থ্রিজি (প্লাস) ভিভিইআর ১২০০ মডেলের রিঅ্যাক্টর। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) প্রকৌশল শাখা অ্যাটমোস্ত্রয় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রতিটি ইউনিটে ১২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এ প্রকল্প। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির স্থায়িত্ব হবে ৬০ বছর। দুই ধাপে ২০ বছর করে বাড়িয়ে মোট ১০০ বছর বিদ্যুৎ উৎপানে থাকতে পারবে কেন্দ্রটি। প্রকল্পের পুরো সময় জ্বালানি ইউরেনিয়াম সরবরাহ করবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সরবরাহ কোম্পানি টিভিইএল। আগামী বছরের অক্টোবরে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আসা শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। গত বছরের ১০ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারমাণবিক চুল্লি বা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসল স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হবে।