নবনির্মিত দুই সেতু অর্থনীতিতে অবদান রাখবে : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

নবনির্মিত মধুমতি ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা বা নাসিম ওসমান সেতু মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে যেমন সহজ ও গতিশীল করবে, একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির গতিকে বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) বেলা একটায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যোগ দিয়ে মধুমতি ও নারায়ণগঞ্জের নাসিম ওসমান সেতুর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আনন্দিত কারণ আজ এই সেতু দুইটি আমি উদ্বোধন করতে পেরেছি। আমি মনে করি যোগাযোগের ফলে আমাদের অবহেলিত অঞ্চলগুলো উন্নত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এখন আমরা দাবি করতে পারি যে বাংলাদেশের সকল জেলার মধ্যে একটা সম্পর্ক হয়, সেই কাজটি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব।
সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ সার্বিক উন্নয়নে আমরা আমাদের কাজ অব্যাহত রাখবে এবং বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। সেজন্য আমরা সকলেই নিরলস পরিশ্রম করে যাব। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
বর্তমান সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছি, জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছি।
‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস হলো আওয়ামী লীগ সবসময়ই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছে। দ্বিতীয় দফায় যখন সরকারে আসি তখন থেকে এ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সমগ্রবাংলাদেশ আমি সফর করেছি। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির। ফলে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। আমরা সরকারে এসে যমুনা নদীর উপরে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করি। এছাড়াও আরও অনেকগুলো সেতু নির্মাণ আমরা সম্পন্ন করেছিলাম,’ যোগ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান স্ত্রীকে রেখেই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানাতে ভারতে চলে যান। আমার সঙ্গে সবসময় তার যোগাযোগ ছিল এবং তিনি আমাকে বড় বোন হিসেবে জানতেন। যখন তিনি পার্লামেন্টে মেম্বার ছিলেন, তখন বারবার আমাকে বলেছেন এই সেতুটা করে দিতে। আমরা এই সেতুর কাজ যখন শুরু করি, তখন তিনি ইহকাল ছেড়ে চলে যান। তাই তার নামেই আমরা এই সেতুটা উৎসর্গ করেছি। কারণ, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পঁচাত্তরের প্রতিবাদকারী। তার নামে সেতুটা করে দিয়ে স্মৃতিটা ধারণ করতে চেয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সত্যি খুব আনন্দিত যে সেতুদুটি আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। এ জন্য আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ জাপান ও সৌদি আরবকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের সহযোগিতায় আজ আমরা এত উন্নতি করতে পেরেছি। বাংলাদেশে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো এগিয়ে আসছে। সৌদি আরব থেকে বিনিয়োগ যেন আসে, আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। জাপান আমাদের অনেক কাজ করে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। অর্থনৈতিতে নারায়ণগঞ্জ একটি বড় ভূমিকা পালন। নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য, তাদের জীবনযাত্রা উন্নত করার লক্ষ্যে একটি সেতু একান্তভাবে দরকার। সে কথাটা মাথায় রেখেই আমরা শীতলক্ষ্যা নদীর উপর তৃতীয় সেতুর নির্মাণ করলাম। ইতোমধ্যে শীতলক্ষ্যার উপরে আমরা আর কয়েকটা সেতু করেছি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সাউথ এশিয়ার এমন একটা জায়গায় আছি যেখানে আমাদের সঙ্গে অন্যান্য দেশ যেমন: নেপাল, ভুটান, ভারত তাদের সংযোগ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। সে জন্য আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম পোর্ট আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট সেটাও আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধুমতি সেতু যেহেতু এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। যার ফলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। ঢাকা থেকে এখন মংলা পোর্ট কাছে হয়ে গেছে। আমাদের বেনাপোলসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলের যে সমস্ত যোগাযোগগুলি আছে সেগুলো সঙ্গে যোগাযোগটাও বাড়ছে। মানুষের সময় বাঁচবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে। সেই সুযোগটা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সেটা করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব। তবে করোনা মহামারির ধাক্কা, আর এই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ আমাদের উন্নয়নের ধারাকে অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। শুধু আমরা নই, বিশ্বব্যাপী মানুষ এই কষ্ট ভোগ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার আবেদন থাকবে আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই, মানুষের উন্নতি চাই। এই যুদ্ধে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যেসব অর্থ ব্যয় হয়, সেই অর্থ সারা বিশ্বের শিশুদের জন্য ব্যয় করা হোক, তাদের শিক্ষা, ভালো জীবনের জন্য ব্যয় করা হোক–বিশ্ববাসীর কাছে সেটাই আহ্বান জানাই।’
এ সময় সরকারপ্রধান জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বাংলাদেশে নিযুক্ত এই দুই দেশের রাষ্ট্রদূতরাও নিজ নিজ দেশের সরকারপ্রধানের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।.