ইলিশের দাম বাড়া অস্বাভাবিক নয় : প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

SHARE

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলিশের দাম কিছু বাড়াটা অস্বাভাবিক নয় বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়ন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মাছের দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ইলিশের বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব এ মন্ত্রণালয়ের নয়। আমি মনে করি, পৃথিবীতে অর্থনীতির যে স্ফীতি এসেছে এতে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। যারা ইলিশ ধরে আনে এরপর যিনি লেবার আছেন বা যারা বিনিয়োগ করেন তাদের কিন্তু কিছু বিষয় রয়েছে। যিনি মাছটা আহরণ করে আনেন তিনি যদি লেবার হন তাকে ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে যেতে হয়, তিনি ঝুঁকি নিয়ে ইলিশটা নিয়ে আসেন। বাজার ব্যবস্থাপনায় কোথাও কোথাও কিছু সিন্ডিকেট কাজ করে। অনেকে প্রচুর ইলিশ আটকে রেখে, বরফে রেখে বাজারে স্বল্প পরিমাণ ইলিশ নিয়ে আসে। এটা দেখার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার বা যারা বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন তাদের। আমি মনে করি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলিশের দাম বাড়াটা অস্বাভাবিক নয়।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, বাজারে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বিক্রি করা আমাদের দায়িত্ব না। আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি। যখন দেখলাম গরুর মাংস এতো টাকার কমে বিক্রি করতে পারবে না। আমরা রমজান, করোনার সময় আমাদের উৎপাদিত ডিম, মাংস ও দুধ কোনো রকম ভর্তুকি ছাড়াই বিক্রি করে দেখিয়েছি যদি অন্যরা লাভ একটু কম করে, মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হয় তাহলে কম দামেও বিক্রি করা সম্ভব। ইলিশ উৎপাদন, আহরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত। কিন্তু বাজারজাতের মতো জনবল আমাদের নেই।
মিয়ানমারের জেলেরা আমাদের সীমানায় আসে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, নৌপুলিশ ও আমাদের কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিকভাবে আহরণ বন্ধকালে কাজ করছে। কাজেই মিয়ানমার অথবা অন্য কোনো দেশের কেউ এসে আমাদের ভৌগলিক এলাকায় মৎস্য আহরণ করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি গোপনে সেটি করতে চায় আমরা কিন্তু তাদের গ্রেফতার করি। এখনও বিদেশ থেকে আমাদের এখানে মৎস্য আহরণ করতে আসা জেলেরা কারাগারে রয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর নজরদারি রাখছি।
মন্ত্রী বলেন, চলতি বছর ১ হাজার ৩৫৩ মেট্রিক টন ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এতে আয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পেয়েছে বাংলাদেশ। গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে ছিল ২ দশমিক ৯৮ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়েছে।
ইলিশ রপ্তানি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বেশ কিছু দেশে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি হয় ভারতে, সেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। হাইকোর্ট যদি কোনো আদেশ দেন, তাহলে অবশ্যই সেটি প্রতিপালন করা হবে। বাণিজ্যিকভাবে ইলিশের রপ্তানি এভাবে হয়নি, এবার যে পরিমাণ রপ্তানি হয়েছে। এবার অধিকাংশ রপ্তানি ভারতে হয়েছে। অন্যান্য কয়েকটি দেশেও ইলিশ গেছে, সেগুলো উপহার কিংবা ব্যক্তিগতভাবে গেছে। কিন্তু বাণিজ্যিক ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ভারতে।
তিনি বলেন, আগে ইলিশ পাওয়াই যেতো না, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এখন ইলিশ অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে, আমার মনে হয় ৬৪টি জেলার সর্বত্র ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ইলিশ পৌঁছানোর আমাদের একটি লক্ষ্য আছে। আমাদের কর্মসূচি সফল করতে পারলে ইলিশ সবার কাছে পৌঁছাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ইলিশ রপ্তানির সময় বাড়ানো আর ঠিক হবে না।
মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনায় নিয়ে মৎস্য সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় ২২ দিন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ সমৃদ্ধ এলাকার জেলেদের জীবনধারণের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি বছর জাটকা ধরা নিষিদ্ধকালে দেশের ২০ জেলার ৯৭টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে ফেব্রুয়ারি-মে পর্যন্ত ৪ মাসের জন্য ৫৯ হাজার ১৪১ মেট্রিক টন ভিজিএফ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া ২০২২ সালে সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধকালে সমুদ্র উপকূলীয় ৩ লাখ ১১ হাজার ৬২টি জেলে পরিবারকে ২৬ হাজার ৮৩ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। গত ১২ বছরে দেশে ইলিশ আহরণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৯০ শতাংশ। এ বছর জেলেদের জন্য ভিজিএফ-এর পরিমাণ বাড়িয়ে পরিবার প্রতি ২০ কেজি হতে ২৫ কেজিতে উন্নীত করা হয়েছে। এর আওতায় দেশের ৩৭ জেলার ১৫৫ উপজেলায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭ টি জেলে পরিবারকে ২৫ কেজি হারে ১৩ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।