প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল : বিদায়ী আইজিপি

SHARE

বিদায়ী পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমি যখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কমিশনার হিসেবে যোগদান করি তখন ডিএমপিতে গাড়ি চুরি, ছিনতাই, মাদকের মতো নানা সমস্যা ছিল। তখন প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল।

তিনি বলেন, সেই সময়ে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের অবদান আমি স্মরণ করি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদকে অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

ডিএমপিতে পেশা জীবনের দীর্ঘ সময়ের স্মৃতিচারণা করে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে আমার একধরনের পেশাগত ও আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯০ সালে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলাম। আবার ২০০০ সালে উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করি। সর্বশেষ ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। আমার পেশা জীবনের ১০ বছর অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলাম।

বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তারা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তাণ্ডবলীলা দমনে আপনার সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশসহ বর্হিবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করে আপনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সারা দেশে ৬ হাজার ৯১২টি বিট স্থাপন করে বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে গুলশান এবং বনানী এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে অপরাধ দমনে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন।

বক্তারা বলেন, পুলিশে আধুনিক ও ডিজিটাইলাইজেশন আপনার হাত ধরেই সূচনা হয়েছে। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ নারী পুলিশ দ্বারা পরিচালিত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে ফেসবুক পেজ, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে কুইক রেসপন্স টিম এবং নারী-শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রতিটি থানায় আলাদা ডেস্ক স্থাপনে নারীরা সহজে সেবা পাচ্ছেন।

তারা আরও বলেন, পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সন্তানদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জেলা পর্যায়ে স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে রাজারবাগ পুলিশ বিভাগীয় হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করেছেন। পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান চালু, নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করে পুলিশে সার্বিক উন্নয়ণে আপনার ভূমিকা চিরদিন অমলিন হয়ে থাকবে।

বক্তারা বলেন, করোনাকালীন আপনার নেতৃত্বে পুলিশ জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে এক বিরল নজির স্থাপন করেছে। যার ফলে সব মহলে পুলিশের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আইজিপির বিদায় অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, জীবনে মানুষ কত কিছু করতে পারে! আপনি বাংলাদেশ পুলিশকে এতো বেশি কিছু দিয়েছেন যার তুলনা করার ধৃষ্টতা আমি রাখি না। যতদিন বাংলাদেশ পুলিশ থাকবে, ততদিন আপনার অভাব অনুভব করবে।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় আপনাকে মাথার ওপর বটবৃক্ষ হিসেবে পেয়েছি। ভালোবেসেছেন, আদর করেছেন, দরকার হলে ধমক দিয়েছেন- কিন্তু দিনশেষে আপনি স্নেহ দিয়ে বুকে টেনে নিয়েছেন, সঠিক রাস্তা দেখিয়েছেন। শত শত মানুষের আশীর্বাদ পাওয়ার যে ক্ষেত্র আপনি তৈরি করেছেন, সেটি যদি পুলিশ ধরে রাখতে পারে তাহলে সামনে আরও এগিয়ে যাবে।

মানুষের কর্মজীবনে একটি বাহিনীকে কতভাবে উপকৃত করা যায় সেটি আপনি করে দেখিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার।

অনুষ্ঠানে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, যু্গ্ম পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা আইজিপির দীর্ঘ কর্মজীবনের ওপর স্মৃতিচারণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে একটি প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।