করতোয়ায় নৌকাডুবি : মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬

SHARE

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত আরও ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে জেলার আওলিয়ার ঘাট এলাকা থেকে দুই জনের, দেবীগঞ্জের করতোয়া ঘাট এলাকা থেকে চার জনের, সালডাঙ্গা ইউনিয়নের করতোয়া নদী থেকে তিন জনের ও দিনাজপুরের একটি নদী থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার হয়।

এর আগে রোববার নৌকিডুবির পর ২৫ জনের আর সোমবার আরও ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান পঞ্চগড় জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় এ পর্যন্ত (মঙ্গলবার দুপুর) ৬৬ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী উপ পরিচালক শেখ মো. মাহাবুবুল আলম মঙ্গলবার সকালে সমকালকে বলেন, ‘সকাল থেকে পঞ্চগড় এবং আশপাশের জেলার আটটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট উদ্ধার কাজ করছে। এর বাইরে রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং রাজশাহী থেকে তিনটি ডুবুড়ি দলে মোট ৯ জন উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন।’ এখন পর্যন্ত ৬৬ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে।

মৃতরা হলেন- হাশেম আলী (৭০), শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), রুপালি ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সানেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সুমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পুষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রুপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০), পারুল রানী (৩২), প্রতিমা রানী (৩৯), শৈলবালা, সনেকা (৫৫), হরিকিশোর (৪৫), শিল্টু বর্মন (৩২), মহেন চন্দ্র (৩০), ভূমিকা রায় পূজা (১৫), আঁখি রানী (১৫), সুমি রানী (৩৮), পলাশ চন্দ্র বর্মন (১৭), ধৃতি রানী দাস (১০) ও সজিব রায় (১০)। বাকি তিনজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

তিন দিন আগে নৌকাডুবির ওই ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। তাদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। স্বজনদের মরদেহ দেখার জন্য এখনো শত শত মানুষ অপেক্ষা করছেন করতোয়ার তীরে। প্রিয় স্বজনের লাশটি শেষবারের মতো দেখার জন্য বিলাপ করছেন বহু মানুষ। তাদের কান্না আর আহাজারিতে আজও ভারী হয়ে আছে করতোয়া পাড়ের আকাশ।

দিনাজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মন্জিল হক বলেন, ‘সকাল থেকেই তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল এবং নদীর পানি কমার কারণে মরদেহ উদ্ধার সম্ভব হবে।’

গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবির ওই ঘটনা ঘটে। সেদিন রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে প্রশাসন ও স্থানীয়রা।

পরদিন ভোর থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০ জনে। এরপর আরও ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার হলে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা ও আহতদের পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।