ভারত থেকে শূন্য হাতে ফিরেছি, এটা বলতে পারবো না : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

ভারত সফর থেকে শূন্য হাতে ফিরেছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, তা নাচক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশটির সঙ্গে নানা সমঝোতা ও সহযোগিতার চুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, আমার মনে হয় না আমি শূন্য হাতে ফিরেছি।

তিনি বলেন, ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেলো, এটা আপেক্ষিক প্রশ্ন। বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে ভারত সব বিষয়েই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এ সফরেও আমরা একেবারে শূন্য হাতে ফিরেছি, এটা বলতে পারবো না।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘ভারত সফর থেকে কী পেলাম?’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রশ্নটি আপেক্ষিত, এই প্রশ্নের জবাব নির্ভর করছে আপনি কীভাবে দেখছেন। ভাগ্যিস প্রশ্ন করেননি কী দিলাম। ’

ভারত সফরে নানা চুক্তি, আলোচনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এ রকম যদি হিসাব করেন, মনে হয় না একবারে শূন্য হাতে এসেছি বলতে পাবেন না। তাছাড়া কী পেলাম কী পেলাম না এটা তো মনের ব্যাপার।

‘কী পেলাম না পেলাম এটা মনের ব্যাপার। বাংলাদেশে এত কাজ করার পর বিএনপি বলে কিছুই করিনি। এখানে বলার কিছু নেই। এটা মানুষের বিশ্বাসের ব্যাপার, আত্মবিশ্বাসের ব্যাপার।’

ভারত থেকে কম দামে তেল আনতে দেশটির কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বাঘাবাড়ি হয়ে উত্তরবঙ্গে তেল পাঠাতে হবে না। সরাসরি ভারত থেকে সেখানে তেল গেলে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি আরও বেগবান হবে। এই তেল আনতে পাইপলাইন করে দিচ্ছে ভারত। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ডিপোতে তেল থাকবে।’

ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এই তরল গ্যাস খুলনায় আনতে চায় বাংলাদেশা

গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্ব পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশটিতে সফর করেন সরকারপ্রধান। দেশটির সঙ্গে সাতটি সমঝোতা সই হয় এই সফরে।

শেখ হাসিনা বিদেশ সফর করলে বরাবর সে সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এতে সফরের বিষয়ে একটি লিখিত বিবৃতি দেন। পরে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাব দেন। সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে সাধারণত রাজনৈতিক বিষয়গুলোই প্রাধান্য পায়।

তবে ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনগুলো একটু ব্যতিক্রম হয় এই কারণে যে, প্রশ্নগুলো সাধারণত সফর নিয়েই থাকে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত সব সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামী লীগবিরোধীরা বরাবর অভিযোগ করে আসছে যে, ক্ষমতাসীনরা ভারতের প্রতি দুর্বল এবং তারা জোরালভাবে দাবি তুলে ধরতে পারে না।

বিপরীতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের কাছ থেকে যা কিছু আদায় করতে পেরেছে তার সবই করেছে আওয়ামী লীগ। বিরোধীরা কথার মালা ছাড়া কিছুই করতে পারে না।

এর আগে শেখ হাসিনা যতবার ভারত সফর করেছেন, ততবার দেশটির সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে খুঁটিনাটি সংবাদ সম্মেলন থেকেই জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে শেখ হাসিনা লিখিত বিবৃতিতে চু্ক্তির বিষয়ে জানান। বিশেষভাবে তুলে ধরেন ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা আদায়ের কথা।

এই সফরে বাংলাদেশ সফরে প্রত্যাশিত উদারতা পেয়েছে কি না- এমন প্রশ্ন ছিল অন্য একজন গণমাধ্যমকর্মীর।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যথেষ্ট আন্তরিকতা আমি পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি যাদের সঙ্গেই কথা হয়েছে তাদের আন্তরিকতা ছিল। বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দলমত কিন্তু এক থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধ বা ছিটমহল বিনিময়ের সময়ও সবাই একমত হয়েছিল।’

পাশাপাশি থাকলে নানা সমস্যা থাকতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আলাপ আলোচনায় সব সমস্যা সমাধান করা যায়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের পর অনেক রেললাইন বন্ধ ছিল। এগুলো আমরা একে একে খুলছি।’

অন্য একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘এই সফরের চুক্তির পর ভারতের গণমাধ্যমে কেউ কেউ লিখেছে, ভারত সরকার তার জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছে।’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা বলছে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে তাদের ওখানে যারা বলছে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছি, তাদের মধ্যে একটা ডিবেট করান। ভালো হবে।’