আটলান্টিকে ঝড়ের কবলে পড়ার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা জানালেন মিথিলা

SHARE

সকলেই জানেন মিথিলা ব্র্যাকে চাকরি করেন। যার ফলে দেশ-বিদেশে ঘুরতে গিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি শেয়ার করেন। নেটিজেনরা সেসব ছবি দেখে হন মুগ্ধ। কিন্তু এর নেপথ্যে যে খুব ভালো অভিজ্ঞতা থাকে না, সে কথাই জানালেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। আটলান্টিক সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, আফ্রিকা থেকে ফিরতে পথে পথে ঘটে যায় দুর্ভোগ। সেসব নিজেই জানিয়েছেন মিথিলা।

সোশ্যাল হ্যান্ডেলে মিথিলা লিখেছেন, “আমি সাধারণত আমার অফিসিয়াল ট্রিপ থেকে সুন্দর ছবিগুলোই শেয়ার করি। আর তাই দেখে অনেকেই আহা-উহু করতে করতে বলে, ‘ইশশ আমারও যদি এ রকম একটা জব থাকত…আপনি কত ঘুরে বেড়ান…আহা। ’ এই সুন্দর ছবির পেছনের অভিজ্ঞতাটা তাদের জন্য শেয়ার করছি। গত দুই সপ্তাহ আমি উগান্ডায় বিভিন্ন রকম ট্রেনিং, ওয়ার্কশপ, ফিল্ড ভিজিট শেষ করে উগান্ডা থেকে ওয়েস্ট আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে আসি এখানকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে একটা আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করতে। আমার কর্মশালা গতকাল (৯ সেপ্টেম্বর) শেষ হয় এবং গতকাল রাতেই আমার সিয়েরা লিওন থেকে কলকাতায় যাবার ফ্লাইট ছিল। আয়রাকে যেহেতু বাড়িতে রেখে এসেছি, কাজের বাইরে আর এক দিনও আমার থাকতে ইচ্ছা করে না বাইরে। ”

দীর্ঘ এক পোস্টে মিথিলা বলছেন, “তো যা-ই হোক, কালকে বিকালবেলা থেকেই প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। সিয়েরা লিওনের রাজধানী, ফ্রি টাউন, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। এবং সিয়েরা লিওনের এয়ারপোর্টটা ফ্রি টাউন থেকে দূরে একটা বিচ্ছিন্ন জায়গায় অবস্থিত, যার নাম ‘লুংগি’। ফ্রি টাউন থেকে এক ঘণ্টা একটা ছোট ফেরিতে আটলান্টিক পার হয়ে লুংগি এয়ারপোর্টে যেতে হয়। ঝড়বৃষ্টির কারণে আমি একটু বেশিই চিন্তিত ছিলাম, কারণ আমার সমুদ্র যেমন ভালো লাগে, তেমনি উত্তাল সমুদ্র ভয়ও লাগে। আমার ফেরি, যেটাকে ‘sea coach’ বলা হয়, সেটার টাইম ছিল রাত ২টায়। আমি সন্ধ্যা থেকে আশায় ছিলাম যে আবহাওয়া রাতে হয়তো ভালো হবে। কিন্তু যত রাত বাড়ছে ততই ঝড়ও প্রকট আকার ধারণ করছে। শেষ পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে রাত ১টায় sea coach টার্মিনালে গেলাম। লোকজন খুবই কম। আমার ফ্লাইট ছিল ভোর ৫:৩০টায় সিয়েরা লিওন থেকে মরক্কোর কাসাব্লাংকায়। সেখান থেকে দুবাই হয়ে কলকাতায় ফেরার কথা। যাহোক তার আগে তো সমুদ্রটা পাড়ি দিতে হবে। ”

জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘রাত ২টায় যখন sea coach-এ উঠে বসলাম তখন বোট ভীষণভাবে দুলছিল। তারপর মাঝ সমুদ্রে যাওয়ার পর দুলুনির সাথে সাথে মাথাটাও ঘুরতে শুরু করল। বিশাল বিশাল পানির ঝাপ্টা আসছিল। মনে মনে বিভিন্ন ধরনের দোয়া পড়তে পড়তে ঘড়িতে সময় যেন এগোচ্ছিলই না! শেষ পর্যন্ত এক ঘণ্টাকে এক জীবন ভাবার আগ মুহূর্তে ফেরি ওপারে পৌঁছাল। ফেরি থেকে নেমে টার্মিনাল অব্দি বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে যেতে যেতেই ভেজা কাক হয়ে গেলাম। তারপর একটা বাসে চড়ে লুংগি এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে বাজল ভোর ৪টা। তারপর ইমিগ্রেশনের বহু কসরত শেষ করে প্লেনে উঠতে গিয়ে আরেকটু ভিজলাম। কারণ বাসে করে রানওয়ের কাছাকাছি গিয়ে প্লেনে ওঠার সময় অবশ্যই কোনো ছাতার ব্যবস্থা ছিল না। ’

ঝড়ের পর আরো দুর্ভোগ ছিল। সেসব বলতে গিয়ে মিথিলা বলেন, “যাক ওই ঝড়ের মধ্যে সমুদ্রে ডুবে না গিয়ে প্লেন পর্যন্ত যে যেতে পেরেছি সেটাই চৌদ্দ গুষ্টির ভাগ্য মনে হচ্ছিল! আমার ফ্লাইটটা ছিল ‘এয়ার মারোক’, যেটা লাইবেরিয়ার রাজধানী ‘মনরোভিয়া’ হয়ে কাসাব্লাংকা যাবে। এই বিষয়টা আফ্রিকায় খুব কমন যে একটা প্লেন লোকাল বাসের মতো মাঝখানে দু-একটা জায়গায় থেমে যাত্রী তুলবে আর নামাবে। এই সময়ে বাকি যাত্রীদের কিন্তু প্লেন থেকে নামতে হবে না। প্লেনেই বসে থাকবে। তো মনরোভিয়াতে ঘণ্টাখানেক থামাসহ সব মিলিয়ে আট ঘণ্টার মতো জার্নি করে দুপুর ২টায় কাসাব্লাংকায় পৌঁছানোর পর আরেক বিপদ হলো। আমার কাসাব্লাংকা থেকে দুবাইয়ের ফ্লাইটটা আমি মিস করলাম। ”

তিনি বলেন, ‘এবার পরের ফ্লাইট আছে পরের দিন, আর এদিকে কাসাব্লাংকায় এয়ারপোর্টে কোনো হোটেল নেই, আর বাইরে ভিসা ছাড়া বের হওয়া যাবে না (অন অ্যারাইভাল ভিসা বাংলাদেশিরা পাবে না)। তো আমি আমার অফিসে যোগাযোগ করে টার্কিশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বুক করালাম, যেটা বিকালে ছাড়বে, কিন্তু ঢাকায় যাবে। শেষ পর্যন্ত টার্কিশে চড়ে রাত ১টায় ইস্তামবুল পৌঁছানোর পর দেখলাম আমার ইস্তামবুল থেকে ঢাকায় যাবার ফ্লাইটটাও সাড়ে ৫ ঘণ্টা ডিলেইড!’

দীর্ঘ পোস্ট লেখার মাঝে বলছিলেন, ‘তো আপাতত আমি ইস্তামবুল এয়ারপোর্টে ঘুম চোখে এই রচনাটি লিখছি। আচ্ছা এর মধ্যে আমার লাগেজটা যে কোন ফ্লাইটে কোথায় চলে গেছে সেটা কিন্তু আমি এখনো জানি না, জানার চেষ্টা করারও শক্তি নেই। ’

গল্পটা যে কারণে বলছিলেন, তার প্রসঙ্গ টেনে মিথিলা বলেন, ‘এই গল্পটা তাদের জন্য লিখলাম যারা শুধু সুন্দর ছবিগুলোই দেখে, তার পেছনের কঠিন সময়ের গল্পগুলো জানে না। এই যে গত তিন সপ্তাহ ধরে, মেয়েকে বাড়িতে রেখে, হাজার হাজার মাইল বিভিন্ন দেশে, শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে, জার্নি করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করা, সেটা নিতান্তই জীবিকার তাগিদে; আমোদ-ফুর্তির জন্যে না। সব সময় সুন্দর ছবি আর ভালো কথাগুলো শেয়ার করি কারণ আমি যা কিছু ভালো, আর পজিটিভ সেটাই ভাগ করে নিতে চাই। একজন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মী হিসেবে আমার কাজ এবং বিভিন্ন দেশে ব্র‍্যাকের কন্ট্রিবিউশন নিয়ে আমি ভীষণ গর্ববোধ করি। তাই পেছনের কঠিন সময়গুলোকেও অভিজ্ঞতা হিসেবেই দেখি। ’

তখনো জার্নি শেষ হয়নি জানিয়ে মিথিলা বলেন, ‘যাই হোক, আরও কম হলেও ১২ ঘণ্টার মতো জার্নি বাকি আছে। সব মিলিয়ে কত ঘণ্টা হলো সেটা হিসাব করার মানসিক অবস্থা আপাতত নাই। আমি দোয়া প্রার্থী। ’