নতুন কিছুই বললেন না খালেদা

SHARE

khaleda10আগ্রহ ছিল সবার। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সব নেতাকর্মীর। আসলে গোটা দেশই তাকিয়ে ছিল। কী বলেন খালেদা জিয়া। অনেকে ভেবেছিলেন কর্মসূচির ধরণ পাল্টাবেন। আবার কেউ ভেবেছিলেন আন্দোলন থেকেও সরে আসতে পারেন তিনি। কোনো ধারণাই যে সঠিক ছিল না তা খালেদার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়।

আন্দোলনে থাকছেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। নিজ কার্যানলয়ে অবস্থানের ৫৩ দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে তিনি তেমনটাই জানালেন। বলেছেন, যৌক্তিক পরিণতি পর্যদন্ত আন্দোলন চলবে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের কথা জানানোর পর থেকে সবার মধ্যে আগ্রহ ছিল কী  নিয়ে আসছেন খালেদা। কিন্তু দীর্ঘ লিখিত বক্তব্যে তেমন নতুন কিছু বলেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

বেশ কিছুদিন ধরে গুঞ্জন চলছিল সংবাদ সম্মেলনে আসছেন বেগম খালেদা জিয়া।গুঞ্জন সত্যি হলো ৫৩ দিন পর। গত ৫ জানুয়ারিকে দশম সংসদ নির্বাচনের দিনকে কেন্দ্র করে তিনি নিজের গুলশান কার্যাসলয়ে অবস্থান করছেন। ৩ জানুয়ারি থেকে কয়েকদিন পুলিশ  কার্যাসলয় অবরুদ্ধ করে রাখলেও এখন পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক।

৫ জানুয়ারি কার্যা্লয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে বাধা দেয়।ওইদিন কার্যাযলয়ের ভেতরে দাঁড়িয়েই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া। পরবর্তিতে ১৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বিএনপি প্রধান। এরপর একাধিকবার দলের শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে বিবৃতি পাঠালেও তিনি সাংবাদিকদের সামনে আসেননি।

সংবাদ সম্মেলনের নির্ধারিত সময় ছিল শুক্রবার বিকেল চারটা। কিন্তু দুপুর থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা খালেদা জিয়ার কার্যা লয়ে হাজির হন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যা লয়ে প্রবেশে কড়াকড়া থাকলেও আজ পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেয়া হয়নি। তবে তখনো ভেতরে যাওয়ার অনুমতি না মেলায় মূল ফটকে সাংবাদিকদের এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়্। পরে বেলা ৩টার দিকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

তবে অন্যদিনের তুলনায় কার্যানলয়ে প্রবেশের সড়কের মুখে আজ পুলিশের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।

এদিকে নির্ধারিত সময়ের ৪৫ মিনিট পর বিকেল পৌনে ৫টায় খালেদা জিয়ার এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। তার পরনে ছিল বেগুনী রঙের শাড়ি। তাকে দেখে সুস্থই মনে হয়েছে। এরপর মঞ্চে অবস্থান নেন দীর্ঘ দিন ধরে তার সঙ্গে থাকা দলের নেতা ও কর্মকর্তারা।

পরে একে একে বেশ কয়েক পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান খালেদা জিয়া। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি। এটাকে সংবাদ সম্মেলন না বলে প্রেস ব্রিফিং বলা যায়।তবে সবার মতামত প্রশ্ন করার সুযোগ দিলে ভালো হতো। সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমাদের না ডাকলেও হতো।ইমেইলে বক্তৃতা পাঠিয়ে দিলে ভালো হতো।”  তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি না হওয়াটা দুর্বলতা হিসেবে চিন্থিত হয়েছে। এছাড়া লিখিত বক্তব্য ছিল অনেকটা খাপছাড়া। বক্তব্যে ধারাবাহিকতা ছিল না। তবে এর দায় তার নয়। কারণ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল ‘তাড়াহুড়ার কারণে স্ক্রিপ্টে একটু সমস্যা আছে’ বলে আগেই জানান। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের সংশোধন করে নেয়ারও অনুরোধ জানান।

এদিকে ১৯ জানুয়ারির মতো আজকের সংবাদ সম্মেলনেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের অভিজ্ঞ শীর্ষ নেতারা ছিলেন না। শুধু স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ছিলেন। এছাড়াও  বিএনপি প্রধানের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ছিলেন।

আর কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল  সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে ছিলেন।

এদিকে খালেদা জিয়া কী বলছেন সে বিষয় জানতে সংবাদ সম্মেলনের সময় কার্যারলয়ের বাইরে কিছু সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, “এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দেশের মালিকানা দেশের মানুষের হাতে ফিরিয়ে দিতে চাই। আমার আহবান- যারা এখনো নিষ্ক্রিয় আছেন, তারা সক্রিয় হোন। নিজ নিজ অবস্থান ও এলাকায় আন্দোলন গড়ে তুলন। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলন।’’

একই সঙ্গে সব দলমত পেশা-শ্রেণি নির্বিশেষে সকল ব্যক্তি ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের শরিক হওয়ার আহবান জানান তিনি।

সরকারের দমন-পীড়ন ‘জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত’ করেছে মন্তব্য করে দেশকে ‘ধ্বংসের হাত থেকে’ রক্ষায় তিনটি দফায় পুরনো দাবিগুলোই নতুন করে তুলে ধরেন ২০ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা ।

তা হলো- ক. ‘আন্দোলন দমনের জন্য’ সারাদেশে বিরোধী দলের যে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

খ. ‘গুম, খুন ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড’ বন্ধ করতে হবে। পুলিশি ও যৌথ বাহিনীর হয়রানি বন্ধ করতে হবে। নেতাকর্মীদের বিরেুদ্ধে দায়ের ‘হয়রানিমূলক সব মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহার করতে হবে। বিচারবহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।

সেই সঙ্গে সভা-সমাবেশ মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত ‘সব প্রকার বিধিনিষেধ’ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

গ. ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে অবিলম্বে জাতীয় সংসদের ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আয়োজন করতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, “আমাদের বিশ্বাস এই প্রক্রিয়াতেই আমরা সমস্যা সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।”