বাংলাদেশে বন্যায় ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত: জাতিসংঘ

SHARE

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৯ জেলায় আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৭২ লাখ মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মানবিক সহায়তা দেওয়া দেশ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে নিয়ে একটি যৌথ মিশনের বন্যাদুর্গত এলাকা সফরের পর বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) ঢাকায় জাতিসংঘ, ব্রিটিশ হাইকমিশন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যৌথভাবে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হচ্ছে- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও শেরপুর। তবে এরমধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বন্যার প্রভাব পর্যবেক্ষণ ও সাড়াদান, ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ এবং সমবেদনা জানানোর উদ্দেশ্যে গত ২ ও ৩ জুলাই জাতিসংঘের একটি যৌথ মিশন, মানবিক দাতা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য) ও এনজিও অংশীদাররা বন্যা কবলিত জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ পরিদর্শন করেন।

এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও সরকারের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে প্রতিনিধি দলটি। সেখানে ৪ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে এক হাজার ৬০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করেছে সরকার। আমরা যে সব সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন।

জাতিসংঘ ও এনজিও অংশীদাররা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা, পানীয় জল, নগদ অর্থ, জরুরি ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, মর্যাদা ও স্বাস্থ্যবিধি কিট ও শিক্ষা সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে এই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করছে। এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বন্যার মাত্রার কারণে এমন কিছু এলাকা রয়েছে যা এখনও দুর্গম। উদ্ধার বা ত্রাণ থেকে বিচ্ছিন্ন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রদায়ের অনেক প্রবীণ এই বন্যাকে তাদের জীবদ্দশায় দেখা যে কোনো বন্যার চেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রায় ৬০ হাজার নারী গর্ভবতী। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার আগামী মাসে সন্তান জন্মদান করবেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো তলিয়ে যাওয়া ও অকার্যকর হওয়ায় এসব নারীদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার সীমিত বা নেই।

যেখানে পানি কিছুটা কমেছে সেখানে আরও পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে ফিরে যাবে; অন্যদের এই ক্ষত নিয়ে পুনর্নির্মাণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাট্রিন ও পানির উৎস মেরামত করা দরকার। শিশুরা ইতেোমধ্যে তিন সপ্তাহের স্কুলে পড়া হারিয়েছে এবং তাদের বই ভেসে গেছে। ২০২০-২০২১ সালে করোনায় স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষার ক্ষতিতে এটা শীর্ষে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, চলমান প্রয়োজনের মুখে ও বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক এনজিওকে এক দশমিক দুই মিলিয়ন ইউরো এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে দুই লাখ ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে; যুক্তরাজ্য ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৮ পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছে; সুইডেন ১৩ মিলিয়ন ক্রোনা দেয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।

একইসঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি মানবিক সহায়তা হিসেবে ১৫ লাখ লোকের জন্য জাতিসংঘ পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৫৪৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা) তহবিলের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছে।