টি-টোয়েন্টিতেও ম্যাচের ভাগ্য বদলাতে পারেনি টাইগাররা

SHARE

উইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ যেন এক অভাগা। যেদিকে তাকায় সাগর শুকিয়ে যায়! এবারের উইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো টস জিতেছিল। কিন্তু টস ভাগ্য বদলাতে পারলেও ম্যাচ ভাগ্য বদলাতে পারেনি। হেরেছে ৫ উইকেটে। আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে বাংলাদেশের করা ১৬৩ রান স্বাগতিকরা পাড়ি দেয় ১০ বল হাতে রেখে। তাও আবার ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করে। জয়সূচক রান আসে অধিনায়ক নিকোলাস পুরানের ব্যাট থেকে ছক্কায়। এই হারে টেস্ট সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও হারালো বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে।

সময় মন্দ গেলে যা হয়, বাংলাদেশ দলের হয়েছে সেটিই। ব্যাটে-বলে আর এক সঙ্গে জ্বলে উঠতে পারছে না। উইন্ডিজ সফরে বা তারও আগে থেকে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ব্যাটিং ব্যর্থতা। কিন্তু গত দুই ম্যাচে সেখানে ভর করেছে বোলিং ব্যর্থতা। আগের ম্যাচে উইন্ডিজের ৫ উইকেটে করা ১৯৩ রানের জবাব বাংলাদেশ দিয়েছিল ৬ উইকেটে ১৫৮ রান করে। এবার আগে ব্যাট করে ব্যাটাররা জমা করেছিলেন ৫ উইকেটে ১৬৩ রান। কিন্তু বোলারদের ব্যর্থতায় তা সহজলভ্য করে তুলেন স্বাগতিক দলের ব্যাটাররা। যে কারণে বাংলাদেশ সিরিজ বাঁচানোর মিশনে নুন্যতম কোনো লড়াই করতে পারেনি।

ব্যাটরদের দেওয়া মাঝারি মানের সংগ্রহ নিয়ে বোলাররা শুরু করেছিলেন দুর্দান্ত। ৪৩ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচের ড্রাইভিং আসনে চেপে বসেছিল। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ‘মুখস্ত’ অধিনায়কত্ব বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। প্রথম ওভারেই আবার সেরা একাদশে ফিরে আসা নাসুম ফিরিয়ে দেন ব্রান্ডন কিংকে। নাসুমের সঙ্গে অপরপ্রান্তে শুরু করা মেহেদি হাসান ফিরিয়ে দেন সামরাহ ব্রকসকে। ফলে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে তাদের রান আসে ২ উইকেটে ৪৩ রান। বাংলাদেশ করেছিল ২ উইকেটে ৪৪ রান। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরের ওভারে সাকিব বল হাত তুলে নিয়েই প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন স্মিথকে। কিন্তু সাকিবের ওভার শেষে মাহমুদউল্লাহ তাকে বোলিং আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন। কারণ সে সময় উইকেটে ছিলেন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মায়ার্স ও অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। সাকিবও বাঁহাতি। একই কাজ তিনি করেছিলেন আগের ম্যাচে। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত প্রথম ওভারে মেডেন উইকেট নেয়ার পরও তাকে দিয়ে পরে আর বোলিংই করাননি উইকেটে দুই ডানহাতি ব্যাটার থাকাতে। এবার মাহমুদউল্লাহ সাকিবকে সরিয়ে কী করলেন? তার পরিবর্তে নিয়ে আসলেন মোস্তাফিজকে। তিনিও বাঁহাতি। শুধু পাথর্ক্য সাকিব স্পিনার, মোস্তাফিজ পেসার। মোস্তাফিজ কি করলেন? সেই ওভারে তিনি দিলেন ১৩ রান। এরপর মোস্তাফিজকেও সরিয়ে নেওয়া হলো। নিয়ে আসা হলো মোসাদ্দেককে। তিনি দিলেন ৮ রান। এ সময় আরেক বাঁহাতি পেসার শরিফুলকেও আক্রমণে নিয়ে আসা হয়। তিনি দেন ১৩ রান। মোস্তাফিজকে আবার আক্রমণে আনলে তিনি এবার দেন ১৫ রান। এক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয় নাসুমকেও। তিনি দেন ১৯ রান। ওভার তখন ১৫টি শেষ। জয়ের কাছাকাছি উইন্ডিজ। ২৬ বলে প্রয়োজন ৩০ রানের। হাতে ৬ উইকেট। কিন্তু তারপরও মাহমুদউল্লাহ সাকিবকে আক্রমণে নিয়ে আসেননি। তাকে যখন আক্রমণে নিয়ে আসেন তখন ম্যাচের কোনো কিছুই অবশিষ্ঠ নেই। উইন্ডিজের জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৪ বলে ২০ রানের। হাতে উইকেট ছয়টিই। সাকিব আক্রমণে আসেন ১৭তম ওভারে। আগে প্রথম বলেই উইকেট পেয়েছিলেন। এবার প্রথম বলেই চার হজম করেন। রান দেন ৮। এভাবেই মাহমুদউল্লাহর মুখস্ত অধিনায়কত্বের ‘বলি’ হয় বাংলাদেশ। প্রশ্ন থেকেই যায় মাহমুদউল্লাহ সাকিবকে সরিয়ে যদি ডান হাতি বোলারদের দিয়ে বোলিং করাতেন তাহলে কথা ছিল কিন্তু তিনিতো বাঁহাতি বোলারদের দিয়েও বোলিং করিয়েছেন তাহলে সাকিব কেন নয়? ডান হাতি বোলারের সন্ধান করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ মোসাদ্দেককে দিয়ে ৪ ওভারের কোটা পূরণ করিয়েছেন। আফিফ হোসেন ধ্রবর হাতেও বল তুলে দিয়েছেন। তিন উইকেটও পান একটি ডেঞ্জারম্যান রভম্যান পাওয়ালকে আউট করে। কিন্তু রান দেন ১০টি। মাহমুদউল্লাহ নিজেও বল হাতে তুলে নেন। পরে দেখা যায় দলের সেরা বোলার ওভার প্রতি সবচেয়ে কম রান দেওয়া সাকিব ২ ওভারে রান দিয়েছেন ১০। যেখানে বাঁহাতি তিন বোলার নাসুম ( ৪-০-৪৪-২), শরিফুল (১-০-১৩-০, মোস্তাফিজের ( ২-০-২৭-০) ওভার প্রতি রান ছিল আকাশ ছুঁয়া। ডান হাতি মোসাদ্দেক ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থেকেছেন।

মাহমুদউল্লাহর এ রকম মুখস্ত অধিনায়কত্বের কারণে উইন্ডিজ ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে যে চাপে ছিল তা থেকে বের হয়ে যায়। মায়ার্স-পুরান জুটি চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৮.৩ ওভারে ৮৫ রান যোগ করেন। মায়ার্স ৩৩ বলে ৫ ছক্কা ও ২ চারে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। পরে ৫৫ রানে আউট হন নাসুমের বলে মেহেদির হাতে ধরা পড়ে। অপরপ্রান্তে অধিনায়ক নিকোলাস পুরান ছিল আরো বেশি আক্রমণাত্বক। তিনি ক্যারিয়ারে নবম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৩০ বলে। তিনটি করে চার ও ছয় মারেন। পরে আরও ৯ বল খেলে দুইটি করে চার ও ছক্কা মেরে যোগ করেন ২৪ রান। অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে পাঁচটি করে চার ও ছক্কা মেরে ৭৪ রানে। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা হয়েছেন তিনিই।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আফিফের ৫০, লিটনের ৪৯, মাহমুদউল্লাহর ২২, এনামুলের ১০ ও মোসাদ্দেকের অফরাজিত ১০ রানে ৫ উইকেটে ১৬৩ রান করেছিল বাংলাদেশ।