‘দ্রুত যুদ্ধের জন্য তৈরি’ সেনার সংখ্যা দশগুণ বাড়াচ্ছে ন্যাটো

SHARE

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট তাদের ‘যুদ্ধ করতে প্রস্তুত’ এমন সেনা সংখ্যা বিপুলসংখ্যক বাড়ানো হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। স্নায়ু যুদ্ধের অবসানের পর ন্যাটো জোটের সম্মিলিত প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে একে সবচেয়ে বড় পুনর্গঠন বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।

ন্যাটো জোটের মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গ বলছেন, এ জোটের ‘দ্রুত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ সেনার সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে প্রায় দশগুণ বাড়িয়ে ৩ লক্ষাধিকে উন্নীত করছে।

এটি একটি নতুন কৌশলগত পরিকল্পনা এবং এ সপ্তাহেই মাদ্রিদে একটি শীর্ষ সম্মেলন হবে যেখানে এটা অনুমোদিত হতে পারে।

স্টোলটেনবার্গ বলছেন, ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি রাশিয়ার প্রত্যক্ষ হুমকির পরই এই সেনাসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তার কথায়, নতুন এই ‘সামরিক ব্লুপ্রিন্ট’ পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করা হবে।

ন্যাটোর এই ‘র‌্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স’ হচ্ছে স্থল, নৌ ও বিমান সেনা ও সরঞ্জামের সমন্বয়ে তৈরি করা একটি বাহিনী- কোন আক্রমণ হলে যাদের দ্রুতগতিতে মোতায়েন করা যাবে। ২০১৪ সালের আগে এ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার আর এখন তা বেড়ে ৪০ হাজার হয়েছে।

ইউক্রেনে রুশ অভিযানের পর এই সৈন্যদের ইতোমধ্যেই লাৎভিয়া, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডে উচ্চ-প্রস্তুতিমূলক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভেনিয়ায় আরও ‘যুদ্ধের জন্য তৈরি’ সেনা দল মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।

স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তীকালে ২০১০ সালে ন্যাটো জোট রাশিয়ার ব্যাপারে নতুন অবস্থান নিয়েছিল। রাশিয়াকে তখন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কৌশলগত অংশীদার’ বলা হতো। তবে এখন তা বদলে যাচ্ছে- জানাচ্ছেন স্টোলটেনবার্গ।

‘ন্যাটো জোটের নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের প্রতি সবচেয়ে বড় ও প্রত্যক্ষ হুমকি হচ্ছে রাশিয়া’- বলেন তিনি।

তবে নতুন পরিকল্পনাটিতে এই প্রথমবারের মতো নেটো জোটের প্রতি চীনের চ্যালেঞ্জগুলোর কথাও থাকবে।

স্টোলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটো জোটের অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করা হবে, জোটের পূর্বদিকের সদস্য দেশগুলোতে যোদ্ধা গ্রুপগুলোকে ব্রিগেড স্তর পর্যন্ত বাড়ানো হবে, আগে থেকে মোতায়েন করা সরঞ্জামগুলোও উন্নত করা হবে।

গব সময়ই ইউক্রেনের পাশে থাকবেন জি-সেভেন নেতারা
জার্মানির ব্যাভারিয়ায় জি-সেভেন শীর্ষ বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে ইউক্রেন প্রসঙ্গই প্রাধান্য পায় আজ।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভিডিও লিংকে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিয়েছেন । এতে তিনি বলেন, তিনি চান যেন শীতকাল আসার আগেই এ যুদ্ধ শেষ হয়।

জেলেনস্কি, রাশিয়ার ওপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্যও জি-সেভেন নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান এবং তাদের আরও ভারী অস্ত্র, বিমান-বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি দেবার আবেদন জানিয়েছেন।

এরপর জি সেভেন নেতারা একটি যৌথ বিবৃতি দেন- যাতে তারা ইউক্রেনের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থনের অঙ্গীকার করেন।

জি-সেভেনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা যত দিন দরকার হয় ততদিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে আর্থিক, মানবিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে যাব এবং তাদের পাশে দাঁড়াব।

বিবৃতিতে এ ছাড়া রাশিয়ার আক্রমণের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলছেন, ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জি সেভেন নেতারা ঐক্যবদ্ধ আছেন, পাশাপাশি এ সংঘাত যেন আরো গুরুতর না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক আছেন।

শলৎজ বলেন, জি-সেভেন নেতারা ইউক্রেন সহায়তা করার জন্য কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তবে এমনভাবে যাতে রাশিয়া ও নেটোর মধ্যে একটি বড় রকমের সংঘাত এড়ানো যায়।

জি-সেভেনের বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়াকে অবশ্যই ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী বন্দরগুলো থেকে কৃষি ও খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজের অবাধ চলাচলের সুযোগ দিতে হবে।

ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার টন শস্য চুরি করছে রাশিয়া?
বিবিসির এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে ইউক্রেন থেকে হাজার হাজার টন শস্য চুরি করে নিয়ে গেছে দখলদার রুশ বাহিনী।

বিবিসির পাওয়া দলিলপত্রে দেখা গেছে যে রুশরা যে প্রশাসনগুলোকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তারা কৃষকদের বলছে, তাদের ভাষায় ‘খাদ্য নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করার জন্য তারা এই কৃষকদের শস্য বাজেয়াপ্ত করছে।

কিন্তু একটি খামার থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজের দৃশ্য থেকে ধারণা হয় যে রুশ সৈন্যরা শস্য লুট করছে। বিবিসি ২০০ শতাধিক কৃষকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল তার মধ্যে কয়েকজন সাড়া দিয়েছেন। তারা বলছেন রুশ সৈন্যরা এসে তাদের ট্রাকে ভর্তিকরা শস্য নিয়ে গেছে।

এই কৃষকদের কিছু গাড়িতে ট্র্যাকিং যন্ত্রপাতি লাগানো ছিল ফলে বিবিসি এগুলো কোথায় গেছে তার উপাত্ত সংগ্রহ করতে পেরেছে। দেখা গেছে এসব ট্রাক প্রথমে রুশ-অধিকৃত ক্রাইমিয়ায় গেছে, এবং সেখান থেকে রাশিয়ায় ঢুকেছে।

মস্কো এ রকম কোনো চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু আমেরিকান কর্মকর্তারা এরকম নয়টি জাহাজের নাম দিয়েছেন, যেগুলো ক্রাইমিয়া থেকে বিশ্বের অন্য বিভিন্ন গন্তব্যে এই চুরি করা শস্য পরিবহন করেছে।

এমন এক সময় এই তথ্য বেরুলো যখন জাতিসংঘ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে দুর্ভিক্ষের সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে। এর কারণে হিসেবে ইউক্রেন থেকে গমের সরবরাহ বিঘ্নিত হবার কথা বলেছে জাতিসংঘ।

ইউক্রেন হচ্ছে পৃথিবীর বৃহ্ত্তম গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি।
তথ্যসূত্র : বিবিসি