আজ আমার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

পদ্মা সেতু নিয়ে বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের এক রকম ক্ষমাই করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজ কারও বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের চিন্তার দীনতা আছে, আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে। তাই তারা হয়তো বিরোধিতা করেছেন।

বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা দুর্নীতির অপবাদ দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বয়স হওয়ার কারণে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়তে বলা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অর্থায়ন বন্ধ করার সুপারিশ করল। পরে কানাডার আদালতে প্রমাণ হলো, কোনো দুর্নীতি হয়নি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার কন্যা হিসেবে এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার দায়িত্ব নিয়েছি। যখন সব প্রতিষ্ঠান অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল, আমি সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। এরপর দেশবাসীর অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছিলাম। মানুষের শক্তি বড় শক্তি, সেই শক্তি নিয়ে এই সেতুর কাজ শুরু করি। অনেকের ধারণা ছিল, নিজস্ব অর্থায়নে কীভাবে করবো? জাতির পিতা আমাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে শিখিয়েছিলেন। সেই শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘সমগ্র বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল, আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ.. এদেশের জনগণই হচ্ছে আমার সাহসের ঠিকানা। জনগণকে আমি স্যালুট জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা বিশ্বের খুবই খরস্রোতা এবং অনুনমেয়। এখানে সেতু করা চ্যালেঞ্জ ছিল। সকলে মিলে এই সেতু অবশেষে আমরা সম্পন্ন করেছি। এর গুণগত মানে কোনও আপস করা হয়নি। সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক উপকরণ ব্যবহার করে। যেভাবে পাইলিং করা হয়েছে, বিশ্বের কোনও সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি। ভূমিকম্প প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের পাঠ্যবইয়ে এই সেতুর নির্মাণশৈলী স্থান পাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি বলেন, এটা একটা আশ্চর্য সৃষ্টি। এটা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই সেতু অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেতু যখন করতে যাই, তখন অনেক মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। মানসিক যন্ত্রণা তাদের পরিবারসহ ভোগ করেছে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এই সেতু নির্মাণের যারা জড়িত ছিল, তাদের ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, পাশে থাকার কারণে। দুই পাড়ের যারা পৈত্রিক ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়েছে, তাদেরও ধন্যবাদ।

শেখ হাসিনা বলেন, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। এটা শুধু সেতু নয়, ইট সিমেন্টের কন্সস্ট্রাকশন নয়; এই সেতু আমাদের অহংকার, গর্ব। আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, প্রত্যয়। যে আমরা এই সেতু তৈরি করবোই, সেই জেদ-প্রত্যয়।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ইতিহাসের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলার মানুষের গর্বের ‘পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ পরামর্শক, ঠিকাদার, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের অধিবাসীদের যাদের জমিজমা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।

তিনি বলেন, কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আজ আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জ্বালা ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহু কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।

সরকারপ্রধান বলেন, ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ খানিকটা বিলম্বিত হয়েছে, কিন্তু আমরা হতোদ্যম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমর আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪১টি স্প্যান যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।। তারুণ্যের কবি, দ্রোহের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় তাই বলতে চাই: সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়। আমরা মাথা নোয়াইনি।

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই দিনে যার যার অবস্থান থেকে শপথ গ্রহণ করি যে, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে উন্নত সোনার বাংলা যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, সেই বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। বার বার আঘাত এসেছে, বাঙালি মাথা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’

বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনিওর সিট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন। এরপর তিনি ফটোসেশনে অংশ নেন।