পদ্মা সেতুর প্রকৃত ব্যয় বাড়েনি: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

SHARE

পদ্মা সেতুর প্রকৃত ব্যয় যেভাবে শুরু করা হয়েছে সেটি দিয়েই নির্মাণ হয়েছে। এখানে অতিরিক্ত কোনো ব্যয় হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম।

তিনি বলেছেন, আমরা ব্যয় বাড়ার কথা বলি, কিন্তু ২০১৫ সালে আমরা যে ব্যয় ধরেছি তার সঙ্গে যদি মূল্যস্ফীতিটা ধরা হয় তাহলে হিসাব করলে ২৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়ে যায়। বাকি ব্যয়টা বেড়েছে নদী শাসনের ফলে। ১২ কিলোমিটার নদী শাসন করার কথা ছিল, সেটা হয়েছে ১৪ কিলোমিটার। এছাড়া মাঝের দুইটি পিলার করতে গিয়ে দেখা গেছে তলদেশ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সেটাতে আরও বাড়তি ব্যয় হয়েছে। আরেকটি বিষয় ছিল তিনগুণ দামে জমিগুলো নিতে হয়েছে। এতে ৩০ হাজার কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেতুর ব্যয়।

শনিবার (১৮ জুন) বেলা ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘শেখ হাসিনার পদ্মা সেতু নির্মাণ: বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশ তথা উন্নয়নশীল দেশসমূহের এক যুগান্তকারী বিজয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটি।

ড. সামসুল আলম বলেন, ২০০১ সালের ৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। তারপর কোনো কাজ হয়নি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট তৈরি করেন। সেখানে এটা বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছর। ২০০৭ সালে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ দশমিক ৫১ মিলিয়ন টাকা। সে সময় ডলারের দাম ছিল প্রতি ডলারের ৭০ টাকা। তারা তখন কিছু করে যেতে পারেননি। ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে প্রথমবার এটির ব্যয় ২০০৯ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেন। সর্বশেষ খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৫৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এটা বলার অর্থ কীভাবে টাকার পরিমাণটা বেড়েছে।

‘অর্থনৈতিক লাভ কী হবে সেটি প্রথম বলা হয়েছিল এক দশমিক ২৩ শতাংশ জিডিপিতে যুক্ত হবে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় জিডিপি হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। তখন কিন্তু আমাদের পায়রা সমুদ্রবন্দর হয়নি, মংলা বন্দরও এত আধুনিকায়ন হয়নি। আমাদের পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রও ছিল না। এই যে পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সুবিধা এখন। আগে সেটি ছিল না। তখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি যে ধরা হয়েছিল সেটি কম ধরা হয়েছে। সবগুলো মিলিয়ে দেখলে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে।’

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর প্রকল্প শুরুর সময়ে বলা হয়েছিল, দারিদ্র্যের হার কমবে বছরে দশমিক ৮৪ শতাংশ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর প্রতি বছর টোল আদায় হবে এক হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। সরকার ৩৫ বছরে সুদসহ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পাবে। সরকারের কাছ থেকে সেতু কর্তৃপক্ষ ঋণ নিয়ে সেতু করেছে। সেতুর প্রতিফল আমরা এই সময়ে পেতে শুরু করবো।

পদ্মা সেতু নির্মাণের পেছনে নানা ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আর্থিক কোনো কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করেনি, যা ছিল সেটি একটি রাজনৈতিক কারণে। পাক-বাঙালি জিন্দাবাদ বলতে যারা ভালোবাসে তাদের ষড়যন্ত্রের অংশও ছিল পদ্মা সেতু।

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে। পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য কম হলেও খর স্রোতের দিক থেকে নির্মাণশৈলীর দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম সেতু এটি। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক যে উন্নয়ন করবে সেটা বলে বোঝানো যাবে না। ওই অঞ্চলের মানুষের যে দুর্ভোগ ছিল সেটি পরিমাপ করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী অদম্য শক্তি কারণেই বাংলাদেশের এত বড় প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। পদ্মা সেতু আমাদের জয়যাত্রার উদাহরণস্বরূপ।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান, পানি সম্পদ ও জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।