ক্লাসের দিন ছুটি, ছুটির দিন ক্লাস, লেখাপড়া অনলাইনে

SHARE

student bদেশে টানা হরতাল-অবরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস প্রায় বন্ধ বললেই চলে। বেশিরভাগ স্কুলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।

তবে ঢাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ওয়েবসাইটে তুলে দিচ্ছেন হোমওয়ার্ক। স্কুলের কাজে বেড়েছে ফেসবুক ও ইমেইলের ব্যবহার। মোবাইল ফোনে শিক্ষকদের কাছে থেকে পড়া বুঝে নেবার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

হরতাল-অবরোধে শিক্ষার বিকল্প এই পদ্ধতিগুলোর ব্যবহার কিভাবে হচ্ছে তা দেখতে ঢাকায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখেছি।

একটি বাড়িতে দেখলাম, টেলিভিশনে চ্যানেল সার্ফিং চলছে। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া সোফিয়া উর্বি বিশ্বাস বলছিলেন, গত দুমাস ধরে এভাবেই তার সময় কাটছে। পড়াশুনা তেমন একটা হয় না।

“আসলে পড়তে বসতে ইচ্ছা হয় না, দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা হয়, টিভি-ফেসবুক-ইমেল-মুভি এইসবই বেশি হচ্ছে পড়াশোনাটা কম হচ্ছে।” বলছিলেন তিনি। সোফিয়া একা নন, টানা হরতাল অবরোধে প্রায় সব শিক্ষার্থীরই একই দশা। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাসের দিন ছুটি, আর ছুটির দিন ক্লাস – এভাবেই চলছে।

তবে ঢাকার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইদানিং বাধ্য হয়ে বিকল্প কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। পড়ার বিষয় ও হোমওয়ার্ক দিয়ে দেয়া হচ্ছে স্কুলের ওয়েবসাইটে ও ইমেইলে।

ঢাকার গ্রিন হেরাল্ড ইন্টারন্যশনাল স্কুলের ছাত্রী সোফিয়া বলছিলেন কিভাবে সেটা হচ্ছে।

“আমাদের স্কুলের একটা ওয়েবসাইট আছে সেখানে প্রতি বিষয়ের জন্য একটা ফাইল দেয়া থাকে। সেই ফাইলে একেক জন শিক্ষক ক্লাস অনুযায়ী তার নির্দিষ্ট অধ্যায় থেকে হোমওয়ার্ক দিয়ে দেন। স্কুল যখন খুলবে তখন এই হোমওয়ার্কটা জমা দিতে হবে।” এভাবেই কিছুটা এগিয়ে রাখার চেষ্টায় ঢাকার ওয়েস্টার্ন স্কুল ও কলেজে বড় স্ক্রিনে ক্রিকেট খেলা দেখানো হচ্ছে। ভাইস-প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ তানভীর হক বলছিলেন, তারা এটা করছেন যাতে একটু হলেও শিক্ষার্থীদের দেখা-সাক্ষাৎ বাড়ে।

তবে তিনি বলছিলেন, তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে ফেসবুকে পড়ার বিষয় আদান প্রদান।

মি. হক বলছিলেন, “ফেসবুকে আমরা নিয়মিত পড়ার বিষয়ে আপডেট করছি। ফেসবুকেই তাদের আমরা বেশি পাচ্ছি। আজকেও আমরা আপডেট করেছি যে আগামি শুক্র-শনিবার আমরা কি করবো। সেই আপডেটেই ছাত্রছাত্রীরা তাদের মতামত জানাচ্ছে।” ঢাকার অনেকগুলো বেসরকারি স্কুলে এই পদ্ধতিতে পড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হলেও ক্লাসের পড়ানোটা মিস করছেন শিক্ষার্থীরা। খেলা দেখার এক ফাকে ওয়েস্টার্ন কলেজের মো: সাইফুল ইসলাম বলছিলেন, বাড়িতে পড়ার সময় কোনো বিষয়ে আটকে গেলে তা বুঝিয়ে দেবার কেউ নেই।

“ক্লাসের পড়াটা বাড়িতে বসে ঠিক হয় না। ক্লাসে টিচাররা যেভাবে বুঝিয়ে দেন, সেটা আমাদের জন্য খুবই দরকারী, কিন্তু বাড়িতে তো তা হয় না। এখন পরীক্ষাও চলছে, আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে।”

তবে অনেক স্কুলে ওয়েবসাইটে পড়া দেয়া হলেও শিক্ষকদের সাথে ফোনে আলাপের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

ঢাকার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল তাহরিমা কামাল বলছিলেন ক্লাসের আদান প্রদান থেকে শিক্ষার্থিরা বঞ্চিত হলেও এভাবে অন্তুত খানিকটা এগিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তারা।

“আমরা যখন লেসনগুলো আপলোড করি তখন শিক্ষকদের নাম্বারগুলো দেয়া থাকে। ছেলেমেয়েরা সমস্যায় পড়লে তারা শিক্ষকদের ফোনে, সামাজিক ওয়েবসাইটে বা ইমেলে যোগাযোগ করতে পারছে। আমরা একটা স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে আমরা এটা করেছি।”

বাংলাদেশে শিক্ষায় এসব বিকল্প ব্যবস্থা ভবিষ্যতেও টিকে যাবে বলে মনে করছেন মিস তাহরিমা। তবে বাড়িতে হাঁসফাঁস অবস্থায় থাকা সোফিয়ার মতো অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস আর ছুটির পুরোনো নিয়মে ফিরে যেতেই বেশি উদগ্রীব। – বিবিসি