খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা জাতির জন্য অপরিহার্য : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, খেলাধুলা জাতি গঠনে অবদান রাখে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা একটা জাতির জন্য খুবই প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধু সেটি উপলব্ধি করেছিলেন এবং ক্রীড়ার মান উন্নয়নে যা যা করা প্রয়োজন তার সবই তিনি করেছেন।’

আজ বুধবার (১১ মে) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেমন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন, সবকিছুর সঙ্গে তিনি ক্রীড়াঙ্গনকেও এগিয়ে নিয়ে যান। ক্রীড়াঙ্গন যেন সময় উপযোগী হয় সে উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন।’ ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামালসহ ক্রীড়াঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রথম ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় ক্রীড়াঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করার কথা বলা হয়।’

খেলোয়াড়দের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জয়ী হতেই হবে, এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামতে হবে এবং খেলতে হবে।’

শিশুদের খেলাধুলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে খেলাধুলার জায়গা কম। শহরের শিশুরা ফ্ল্যাটে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। ফ্ল্যাটে বাস করে শিশুরা ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের বাবা-মার উচিত এমন ব্যবস্থা করা, যাতে তাদের ছেলেমেয়েরা হাত-পা ছুড়ে খেলতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ খেলাগুলো আমাদের চালুর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সহায়তা করছি। আমরা চাই, আমাদের এ খেলাগুলো আরও এগিয়ে যাক।

তিনি বলেন, ডাংগুলি, কাবাডি থেকে শুরু করে আমাদের দেশীয় খেলাগুলো আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় আনতে হবে।

দেশের প্রতিটি উপজেলায় ছোটো পরিসরে খেলার মাঠ নির্মাণে সরকারের নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নির্মাণ কাজে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে সতর্ক করেন তিনি।

তিনি বলেন, সারাদেশে প্রত্যেক উপজেলায় খেলার মাঠ, সেই খেলার মাঠগুলো খুব বড় স্টেডিয়াম না, ছোটো করে, মিনি স্টেডিয়াম আমি নাম দিয়েছি। কাজেই সেটার নির্মাণকাজ চলছে। এটা সময় নিচ্ছে, আমি মনে করি এটা আরও দ্রুত শেষ করা দরকার। এপর্যন্ত ১৮৬টি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

আরও ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তবে আমি মনে করি, এ ব্যাপারে যথেষ্ট সময় নেয়া হচ্ছে, যাতে আর সময় নেয়া না হয় সেটা দেখতে হবে।

প্রতি জেলায় জেলায় স্টেডিয়ামগুলোকে শুধু ক্রিকেটের জন্য নির্দিষ্ট না করে, সব খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এই স্টেডিয়ামগুলো সব খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ক্রিকেটের জন্য পিচ তৈরি থাকবে, সেটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্টেডিয়ামগুলো যদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, শুধু ক্রিকেট নয় সব ধরনের খেলাধুলা, স্পোর্টস সেখানে চলবে, নইলে ওটা পড়ে থাকে, নইলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। সেটা যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে খেলাধুলার দিকে আমাদের ছেলেমেয়েরা আরও বেশি আগ্রহী হবে।

খেলাধুলাকে এক ধরনের শরীরচর্চা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে শারীরিক, মানসিকভাবেও আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট উন্নত হবে।

প্রতিটি খেলায় জয়ের মানসিকতা নিয়ে ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামতে খেলোয়াড়দের প্রতি পরামর্শ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি মনে করি ক্রীড়াঙ্গনে আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড়, সংগঠক, যারা আনুষঙ্গিক থাকেন, প্রত্যেকেই যদি মনে মনে সব সময় এই চিন্তাটা করেন যে আমরা যুদ্ধে বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা কখনো পরাজিত হবো না, পরাজয় মেনে নেব না। আমাদের জয়ী হতেই হবে। এই আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে যদি মাঠে থাকা যায় যেকোনো খেলায়, যেকোনো ইসে আমরা জয়ী হতে পারি। কাজেই আমাদের মাঝে সেই আত্মবিশ্বাসটা সবসময় থাকতে হবে। সেটাই আমার আহ্বান।

২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ক্রীড়া ক্ষেত্রে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ক্রীড়াবিদদের সাফল্যের কথা ওঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।

ক্রীড়া খাতে দেশের নারীরাও পিছিয়ে নেই বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের স্পোর্টস মিনিস্টারকে বলতে পারি, ফুটবল ক্রিকেট সব ক্ষেত্রে নারীরা কিন্তু অনেক পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। তাদেরকে একটু বেশি করে সুযোগ দিতে হবে এবং আরো উৎসাহিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন, তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সংসদ ভবনের পাশে যে মাঠ, সেটা আমরা নির্মাণের জন্য কাজ শুরু কিরেছি। বিশেষ চাহিদা সম্পন্নরা সেখানে খেলাধুলা করবে। সেখানে তাদের জন্য একটা অ্যাকাডেমি আমরা তৈরি করে দিচ্ছি।

তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কারণ তারাই সব থেকে বেশি সম্মান আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে। তারা তাদের যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ২১৬টি স্বর্ণ, ১০৯টি রৌপ্য ও ৮৪টি ব্রোঞ্জ পদক দেশের জন্য জিতেছেন বলে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

প্রধানমন্ত্রীর মতে, তারা কিন্তু তাদের পারদর্শিতা আরও বেশি দেখাচ্ছে। আমাদের যারা সুস্থ, তারা যা পারছেন না এরা কিন্তু আরও বেশি পারে। এটাই আমার ধারণা, আমি দেখতে পাচ্ছি।