পদে থাকছেন গোটাবায়া, শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের প্রস্তুতি

SHARE

সংকটের মুখে পড়ে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের জায়গায় নতুন একজনকে নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।

দেশটির সংবাদমাধ্যম ফ্যিনান্সিয়াল টাইমস মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এতথ্য জানিয়েছে।

নিজে পদে থেকেই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া। এর মাধ্যমে তার পদ ছাড়া নিয়ে যে দাবি উঠেছে, তাতে তার সাড়া না দেয়ার স্পষ্ট বার্তা এলো।

বৌদ্ধ ধর্মযাজকদের একটি দল সোমবার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতে গেলে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোটাবায়া।

তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ হবে। গঠন করা হবে মন্ত্রিসভাও। মন্ত্রিসভা গঠনের আগে এদিনই সকালে দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার বৈঠক হবে।

সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য, এমন ব্যক্তিই শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাবেন বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজপাকসে।

বেশ কিছুদিন ধরেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে উত্তাল শ্রীলঙ্কা; চলছে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন।

এ অবস্থায় এক বৈঠকে গোটাবায়া সঙ্কট সমাধানে বড় ভাই মাহিন্দাকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন গত শুক্রবার। এর পরই সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন মাহিন্দা রাজাপাকসে।

ডেইলি মিরর বলছে, পার্লামেন্টে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন প্রেসিডেন্ট। অবশ্য বিরোধী এসজেবি পার্টির নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছে তার দল।

এখন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন আর মন্ত্রিসভাতেই কারা থাকছেন, সে সিদ্ধান্ত জানতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

শ্রীলঙ্কায় টানা কয়েকদিন ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলন সোমবার আরও বড় রূপ ধারণ করে। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনে বসা বিক্ষুব্ধদের ওপর হামলা চালায় সরকার সমর্থকরা। বেশ কিছু জায়গায় সংঘর্ষ হয়। শতাধিক মানুষ আহত হয়ে ভর্তি হয় হাসপাতালে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। প্রথমে কলম্বো এবং পরে পুরে দেশে জারি করা হয়েছে কারফিউ। এমন প্রেক্ষাপটেও নির্দেশনা অমান্য করেই মাঠে আছে আন্দোলনকারীরা।

সোমবার রাজধানী কলম্বোর কাছে নিত্তামবুয়া এলাকায় নিহত হন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজেনা পেরামুনার (এসএলপিপি) এমপি অমরাকীর্থি আথুকোরালা।

সরকার বিরোধীদের হামলার মুখে পড়ার পর এই এমপির মরদেহ উদ্ধার হয়। তবে তার মৃত্যু নিজের ছোড়া গুলিতেই হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের কুরুনেগালা শহরে দেশটির সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়ি ‘মেদামুলানা ওয়ালাওয়াতে’ আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অন্য বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রীর গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।

ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক রিজার্ভের সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতিতে স্মরণকালের ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় ধুঁকছে। এ জন্য রাজাপাকসে সরকারের দুর্নীতিকে দুষছে দেশটির জনগণ।

এমন প্রেক্ষাপটে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে শুক্রবার রাতে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে।

সব মিলিয়ে বিক্ষোভে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দোকানপাট, গণ-পরিবহন বন্ধ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে সাধারণ জনগণ। বিপাকে পড়েছে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ।