বেতন নিয়েও খেলবে না, এটা কেমন কথা : সাকিব সম্পর্কে পাপন

SHARE

সাকিব আল হাসানের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে না খেলার বিষয় নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বিষয়টি নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও।

কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সব ফরম্যাটে খেলার আশ্বাস দিয়েও না খেলার বিষয়টি নিয়ে নাখোশ তিনি। সাকিব সম্পর্কে তাই বেতনের কথা উল্লেখ করতে দ্বিধাবোধ করেননি বিসিবি সভাপতি।

গতকাল সোমবার (৭ মার্চ) সংবাদমাধ্যমকে পাপন বলেন, ‘চুক্তিতে মাসে মাসে বেতন নিবে আর খেলবে না, এটা কেমন কথা। আমার কাছে (তালিকা) পাঠিয়েছে কে কোন সংস্করণে খেলতে চায়। সেটার ওপর ভিত্তি করেই আমি চুক্তি করবো, কাকে কোন ফরম্যাটে আমরা নিবো। ‘

বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি করার আগে এইবার ক্রিকেটারদের সবার মতামত যাচাই করে নেওয়া হয়েছে। ক্রিকেটাররা যে ফরম্যাটে খেলতে আগ্রহী সে ফরম্যাটেই তাদের চুক্তিতে রাখা হয়েছে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে কোচিং স্টাফ, নির্বাচক প্যানেলের উপর।

বিষয়টি নিয়ে পাপন বলেন, ‘অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা সব ফরম্যাটে খেলতে চায়। কিন্তু তাকে আমরা সব ফরম্যাটে রাখবো কি না এটা কোচিং স্টাফ, নির্বাচক প্যানেল, ম্যানেজমেন্ট তারা ঠিক করবে। চাইলেই তো আর হবে না। ‘

সাকিবের শেষ মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে না চাওয়ার সমালোচনার পাশাপাশি নাজমুল হাসান পাপন তার বক্তব্যর যুক্তিও খন্ডন করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি বলে বসেন যে, সাকিব এখন যেভাবে শারীরিক ও মানসিক ধকল এবং অবসাদগ্রস্ততার কথা বলছে, আইপিএলে দল পেলে কিংবা আইপিএল খেলার সুযোগ পেলে কী তা বলতো?

এ প্রসঙ্গে বিসিবি বিগ বসের কথা, সাকিব যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্তই থাকবে, তাহলে আইপিএল খেলতে চেয়েছে কেন? ফিটনেস ও মানসিকভাবে ফিট না থাকলে তো আর আইপিএল খেলার ইচ্ছে পোষণের কথা না। যুক্তিতে তো তাই আসে।

এ সম্পর্কে পাপনের কথা, ‘ও যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে, তাহলে তো আইপিএলের জন্য খেলতে যাওয়ার কথা না; কিন্তু সে তো আবেদন করেছে। তাহলে কি আইপিএলে সুযোগ পেলেও এ রকম বলতো? বলতো খেলব না? লজিক্যালি চিন্তা করে তো আমার তাই মনে হয়।’

প্রায়ই দেখা যায় সাকিব ও তামিমসহ সিনিয়র ক্রিকেটারদের সামলাতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে বিসিবির। তাদের বিপক্ষে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনও নিতে বিসিবি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে।

সাকিব-তামিমরা অনেক বড় খেলোয়াড়। তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, অর্জন, কৃতিত্ব এবং জাতীয় দলে তাদের পারফরমেন্সও প্রচুর। তারাই টিম বাংলাদেশের চালিকাশক্তি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের বেশিরভাগ অর্জন ও সাফল্যের রূপকার ও জয়ের নায়কও সাকিব-তামিমরা।

তারপরও ভুলে গেলে চলবে না। তারাও বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। বোর্ড তাদের বেতন দেয়। বোর্ডের সমুদয় নিয়ম-নীতি মেনে চলা তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য; কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, সিনিয়রদের কেউ কেউ নিজের ইচ্ছেতে এই সিরিজ, ওই সিরিজ খেলবো না বলে জানিয়ে দেয়। খেললেও এক ফরম্যাটে খেলবো, অন্য ফরম্যাটে খেলবোনা বা খেলতে চাই না মার্কা কথা-বার্তা বলেন।

বোর্ডও হ্যাঁ, ন্যা- করে শেষ পর্যন্ত তা মেনে নেয়। এসব কারণেই ভাবা হয় সিনিয়রদের নজরকাড়া পারফরমেন্স আর বিশাল তারকা খ্যাতির কাছে কী বিসিবি তাহলে অসহায়?

আজ সন্ধ্যায় এ প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছিল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে। তিনি এ প্রশ্ন শুনে যেন অগ্নিশর্মা। তার পাল্টা প্রশ্ন, কার কাছে অসহায় হবো? কার কাছে? কেন অসহায় হব?

এটুকু বলেই থামেননি পাপন। সেই রিয়াদের জিম্বাবুয়েতে গিয়ে হঠাৎ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসা, তামিম ইকবালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে না চাওয়া আর দেশ ছাড়ার চারদিন আগে সাকিবের দক্ষিণ আফ্রিকা যেতে না চাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘রিয়াদেরটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। সে আমার বাসায় এসেছিল। তামিম আলাপ করে নিয়েছে। সে খেলতে চায় না। সাকিবের ব্যাপারটা একেবারেই নতুন। টেস্টে জানতাম, ওয়ানডে নতুন। ওরা যদি খেলতেই না চায় তাহলে তো কিছু বলার নেই।’

সিনিয়রদের এমন আচরণ আর আগামীতে সহ্য করা হবে না। তাই মুখে কড়া হুঁশিয়ারি, ‘এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আমাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে যেগুলো কঠিন হবে। সেটা আবার আপনাদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হবে। তবু চেষ্টা করছি।’

পাপন আরও বলেন, ‘এবার বিসিবি সভাপতি হতেই চাইনি। এসব আমার পক্ষে গ্রহণ করা কঠিন। আপনার চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়েরা খেলতে বাধ্য। কারও জন্য ছাড় দেব, কারও জন্য কঠিন হবে। এ কারণে হতে চাইনি।’

ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সটাও তার বিবেচনায় আছে। কে কী করছেন আর কে কেমন খেলছেন? তাও জানতে চান বিসিবি সভাপতি। ব্যর্থতায় কোচের দোষ না খোঁজার পক্ষে থেকে পাপন বলেন, ‘১০ ম্যাচে কে কী খেলেছে। পারফরম্যান্স দেখেন? এখানে কোচের দোষ কী? কোনো ফিল্ডিং কোচ কী বলে ক্যাচ ছেড়ে দাও? যে পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছেন ওদের জবাবদিহিতার সুযোগ থাকছে না।’

বিসিবি বিগ বস বোঝানোর চেষ্টা করেন, তারকা ক্রিকেটারদের বিপক্ষে কোন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়াও সহজ নয়। তাই এমন কথা মুখে, ‘সাকিব যদি কোনো সিরিজে না যায়, কেউ কিছু বলবে না; কিন্তু দল থেকে যদি বাদ দিই তখন তো বোর্ডকে দুষবে।’