আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব: সিইসি

SHARE

নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়ার পর রোববার প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে সিইসি হিসেবে শপথ নিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, মানুষের জীবনটাও চ্যালেঞ্জ, নির্বাচনও একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কোনো চ্যালেঞ্জকে ভয় পেলে হবে না। চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করতে হবে।

মুন্সেফ হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর নানা পদ পেরিয়ে সচিব হিসেবে অবসর নেওয়ার পাঁচ বছর বাদে এবার নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পেলেন হাবিবুল আউয়াল।

সাংবিধানিক এ দায়িত্ব সঠিকভাবে, দক্ষতার সঙ্গে, নিরপেক্ষভাবে পালনে সবার সহযোগিতা চেয়ে নতুন সিইসি বলেন, সবার আস্থা অর্জনে নিজেরা যেমন ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন, তেমনি সব অংশীজনের মতামত নিয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করবেন।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। জাতীয় হোক, স্থানীয় নির্বাচন হোক। চ্যালেঞ্জ যেটা এখনও বুঝে উঠিনি। দায়িত্ব নিলে চারদিকে তাকিয়ে বুঝব আসলে চ্যালেঞ্জ আছে কি না? সেই চ্যালেঞ্জগুলোকে কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে, সে লক্ষ্যে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, কর্মপন্থা নেব, কৌশল নিরূপণ করব।

দায়িত্ব যে শুধু ইসির নয়, সেটা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একা নির্বাচন করে না। নির্বাচন একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। সবাইকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। কমিশনও সবার সহযোগিতা আদায় করে নেবে।

নতুন সিইসি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সবার অংশগ্রহণমূলক ভোটের প্রত্যাশার কথা একদিন আগেই বলেছেন।

সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আশাবাদী, আগামী নির্বাচন আমি যে সহকর্মী পেয়েছি ওদের উপর আমার আস্থা আছে। আমার উপর তাদের আস্থা আছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দেওয়ার চেষ্টা করব।

ইসিতে দায়িত্ব পালনে সহকর্মী হিসেবে হাবিবুল আউয়াল পাচ্ছেন সাবেক জজ রাশেদা সুলতানা এমিলি, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আহসান হাবীব খান, সাবেক সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।

নতুন সিইসি বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে সহকর্মীদের সঙ্গে বসে ঐকমত্য পোষণ করে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা আশা করি, সকলের সহায়তা নিয়ে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এগোব।

রোববার শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলেও সোমবার নির্বাচন ভবনে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবেন তারা।

সিইসি বলেন, আমরা মাত্র শপথ নিয়েছি। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নিয়েই আমাদের দায়িত্ব আরোপিত হয়ে গেছে। বাস্তব দায়িত্ব কার্জস্থলে গ্রহণ করিনি। আগামীকাল যাব, আমরা সহকর্মীরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করব। ভাবের আদান-প্রদান করব। সংবিধানে, আইনে আমাদের কী কী দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে, সেগুলো জানব। ভবিষ্যতে এ দায়িত্ব কীভাবে পালন করব, এ মুহূর্তে বলতে পারব না; আগামীতে আরেকটু ঋদ্ধ হয়ে, লেখাপড়া করে জেনে গণমাধ্যমে কথা বলতে পারব।

এর আগে এদিন বিকেলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে শপথ নেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অপর চার নির্বাচন কমিশনার। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী শপথ বাক্য পাঠ করান।

অনুষ্ঠানে প্রথমে শপথ নেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর কমিশনার হিসেবে পর্যায়ক্রমে শপথ নেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

এর আগে, গত ৫ ফ্রেব্রুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন- ২০২২’ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে গঠিত সার্চ কমিটির অপর পাঁচ সদস্য ছিলেন- হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন এবং লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

এ কমিটি দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করেন। সে সব বৈঠকে অংশ নেওয়া অধিকাংশের দাবির প্রেক্ষাপটে ইসি গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে প্রস্তাবিত তিন শতাধিক নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ, সাবেক বিচারপতি, বিচারক, আইনজীবী, সাবেক আমলা, সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তির নাম সেই তালিকায় উঠে আসে। তবে দুইবার সুযোগ দেওয়ার পরেও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে সার্চ কমিটির কাছে কোনো নাম প্রস্তাব করেনি।

এমন প্রেক্ষাপটে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে মোট ১০টি নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে সার্চ কমিটি। সেই নামের তালিকা থেকে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতি নতুন সিইসি ও অন্য চারজন কমিশনারকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেন। ওইদিনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর আজ রোববার বিকেলে তারা ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশনের সিইসি ও কমিশনার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন।