‘রানা প্লাজায় আহত ৭৭৭ জনকে চাকরি দেয়ার তথ্য বানোয়াট’

SHARE

image_81190_0বিজিএমইএ’র মাধ্যমে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত ৭৭৭ জন শ্রমিককে চাকরি দেয়ার তথ্যকে সম্পূর্ণ বানোয়াট বলে অভিযোগ করেছেন রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকরা।

রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রানা প্লাজা গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে আহত শ্রমিকরা এসব কথা বলেন। ‘আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসারে ক্ষতিপূরণ নিরাপদ কর্মস্থল ও ক্ষতিপূরণ আইন যুগোপযোগী করাসহ ছয় দফা দাবিতে’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলামের কড়া সমালোচনা করে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, “আতিকুল ইসলাম শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আহত কোনো শ্রমিক বিজিএমইএ’র সহযোগিতায় চাকরি পেয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি আমরা খুঁজে পাইনি।”

মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, “যারা গুম-খুন করে তাদের শক্তি এখন অনেক বেশি। সরকারই তাদেরকে মদদ দিচ্ছে। এই সরকার রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ কখনই দেবে না। এটা আদায় করতে হলে গণজাগরণ মঞ্চের মতো সব শ্রমিককে একত্রিত হতে হবে।”

তিনি বলেন, “বায়ার, বিভিন্ন সংগঠন ও বিত্তশালীরা রানা প্লাজায় নিহত-আহতদের জন্য কত টাকার সহায়তা দিয়েছেন তার সুস্পষ্ট তথ্য জনসম্মুখে এখনো প্রকাশ করেনি সরকার। শ্রমিকদের এসব ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে শ্রমিকরা জানতে চায়।”

‘সরকারকে শ্রমিক বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “গার্মেন্ট মালিকদের এক হাজার ৮১০ কোটি টাকা উৎস কর মওকুফ করে দিয়েছে সরকার। অথচ বিজিএমইএ রানা প্লাজা বাবাদ ব্যয় করলেন মাত্র ১৪ কোটি টাকা। এতে বুঝা যাচ্ছে মালিকরা শ্রমিকদের শুধু শোষণ নয়, মৃত্যুর পর তাদের লাশ নিয়েও ব্যবসা করে।”

প্রবীণ এই শ্রমিক নেতা বলেন, “বিজিএমইএ ও সরকার বলছে শ্রমিকদের সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু কাকে, কোথায়, কি পরিমাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে শ্রমিকরা কিছুই জানে না। এসব বিষয়ে খুব শিগগিরই তালিকা প্রকাশ করে দেশবাসীকে জানাতে হবে।”

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইমদাদুল ইসলাম বলেন, “বিজিএমইএ ও সরকার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তারা বলেছেন আহত শ্রমিকদের চাকরি দেয়া হয়েছে। কিন্তু চাকরি পেয়েছে এমন কোনো শ্রমিকের খবর আমরা এখনো পাইনি।”

তিনি বলেন, “বিজেএমইএ’র হায়দার নামে একজন কর্মকর্তা আমাদের বলেছেন, তোমরা হাত-পা কেটে আস, সেগুলো দেখিয়ে তোমাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। আমরা আহত হওয়ার পরও তিনি বলছেন শরীরে কোনো অঙ্গ কেটে দেখাতে। তার এই জঘন্য পরামর্শ কি ইঙ্গিত বহন করে তা সরকারের কাছে জানতে চাই।”

রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় পঙ্গু নিলুফা বেগম বলেন, “বিজিএমইএ ও সরকার নিহত ও আহত শ্রমিকদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখেনি। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের এত টাকা গেল কোথায়? কেন সরকার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করছেন না? এসব টাকা তো সরকারের তহবিল থেকে খরচ হবে না। বিভিন্ন বায়ার ও বিভিন্ন সংগঠন এসব টাকা দিয়েছে। তাহলে তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করছে কেন?”

এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “এক বছর চিকিৎসা নেয়ার পর ডাক্তাররা এখন বলছে আমার ডান পা কেটে ফেলতে হবে। এই পা-কে আর সুস্থ করা যাবে না। বাকী জীবন ধুকে ধুকে মরতে হবে আমাকে। শুধু আমি নয় আমার মতো শত শত শ্রমিককে এভাবেই পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে।”

মানববন্ধনে আহত শ্রমিক ও আয়োজক সংগঠনের নেতারা উপস্তিত ছিলেন।