ইসি নিয়ে বিএনপির বক্তব্য কুৎসিত অপরাজনীতি: হানিফ

SHARE

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যকে কূটকৌশলের অংশ এবং কুৎসিত অপরাজনীতি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ।

তিনি বলেছেন, বিএনপির লক্ষ্যই হচ্ছে দেশে অসুস্থ রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা। দেশে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন হোক এটা তারা চায়নি। তারা চেয়েছিলো ‘আজিজ মার্কা’ কমিশন। তাদের লক্ষ্য ছিলো ইসি গঠন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। ইসি গঠন নিয়ে যেসব কর্মকাণ্ড হচ্ছে এর দায়ভার কি বিএনপি এড়াতে পারে?

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে সাংবাদিক বাণী ইয়াসমিন হাসির লেখা ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশে প্রবন্ধ পঞ্চাশ’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, সার্চ কমিটি গঠনকে মির্জা ফখরুল বলেছেন ‘তামাশা’। অথচ বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সময়ে কারো সাথে আলাপ না করে ইসি গঠন করেছে। বর্তমানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সবচেয়ে উত্তম পন্থা অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিএনপির দাবির মুখে সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করেছে। আইনমন্ত্রী খসড়া বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করলেন। সেখানে বিএনপির সংসদ সদস্যরাও ছিলেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ২২টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছে। সংসদের ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন ঘটনা।

তিনি আরও বলেন, আইন যখন পাস হলো তখন বিএনপি বলতে শুরু করে, সরকার তড়িঘড়ি করে আইন করেছে। রাষ্ট্রপতি আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করলেন। বিএনপির সমমনা অনুসারীরাও সার্চ কমিটিকে নাম দিয়েছে। বিএনপি সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব না করলেও তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে নাম দিয়েছে। সার্চ কমিটির কাছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে নাম দিয়েছেন সেটাই বিএনপির দেওয়া নাম। উনি নাম দেওয়া মানেই বিএনপির নাম দেওয়া।

হানিফ বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে দুঃশাসন চেপে বসেছিলো। স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার লোক ছিলো না, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ ছিলো, ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিলো, বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ ছিলো, ৩২ নম্বরের দুয়ারে তালা দেওয়া ছিলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরে বাড়ির ভেতরে যেতে পারেননি। আওয়ামী লীগকে খণ্ড-বিখণ্ড করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। সে সময়ে দেশে আশার আলো নিয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

দেশের যা কিছু অর্জন আওয়ামী লীগের হাত ধরে হয়েছে দাবি করে হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে আর দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শত প্রতিকূলতা মাড়িয়ে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সন্তান যেমন মায়ের কাছে নিরাপদ ঠিক তেমনই শেখ হাসিনার কাছে নিরাপদ বাংলাদেশ। দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনার ধারেকাছেও কেউ নেই।

তিনি বলেন, বাণী ইয়াসমিন হাসি সাংবাদিক এবং লেখক। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনি কোনো কম্প্রোমাইজ করেন না। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আমাদের অহংকার, সে জায়গায় হাসির মতো ডেটিকেটেড মানুষ প্রয়োজন। সরকারের ভুল-ত্রুটি তুলে ধরতেও তিনি পিছপা হন না। ভবিষ্যতেও তার প্রতিবাদী লেখা অব্যাহত থাকবে।

আওয়ামী লীগের এ জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, দেশের সব অর্জন রাজনীতিবিদদের হাত ধরে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে টানা নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশ আজ চরম দরিদ্র্যতা থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এই সবকিছু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে।

হানিফ বলেন, বিপথগামী রাজনীতিবিদরা দেশের রাজনীতিতে কলঙ্ক লেপন করেছেন। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিলো বিপথগামীদের কাজ। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় তারেক রহমানের নেতৃত্বে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিলো। সেই বিএনপি এখন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে উন্নয়নের অংশীদার দেশগুলোর কাছে মিথ্যাচার করছে।

তিনি বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দলে গ্রুপিং ছিলো না, লবিং ছিলো না। আমরা তার নেতৃত্বে দলকে শেখ হাসিনামুখী করেছিলাম, ঐক্যবদ্ধ করেছিলাম। সৈয়দ আশরাফের মতো গ্রহণযোগ্য, সৃজনশীল নেতা বাংলাদেশে আর পাওয়া যাবে না।

জাগরণ আইপি টিভির প্রধান সম্পাদক ও গৌরব ৭১’এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান, কিশোরগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জেড. এম. পারভেজ সাজ্জাদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শেখ আদনান ফাহাদ, আইনজীবী ও গবেষক ব্যারিস্টার ফারজানা মাহমুদ, আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক সরকার প্রমুখ।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল, গৌরব ৭১’এর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুপম, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশে প্রবন্ধ পঞ্চাশ’ বইয়ের লেখক সাংবাদিক বাণী ইয়াসমিন হাসি প্রমুখ।