কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্ন জাগিয়ে রাখল টাইগাররা

SHARE

bdcricket5স্কোরবোর্ডে স্কটল্যান্ডের রানটা দেখে মনটা আঁতকে উঠাই ছিল স্বাভাবিক। এত বড় রান বাংলাদেশ খুব কমই তাড়া করে জিতেছে। তবে ম্যাচ যারা দেখেছেন শুরু থেকে তাদের ভড়কে যাওয়ার সম্ভাবনা সেভাবে ছিল না। কিছুটা ছোট আকৃতির নেলসনের মাঠটা এক কথায় রানপ্রসবা।

আইসিসি সহযোগী স্কটল্যান্ড সেই সুবিধা ভোগ করে থাকলে বাংলাদেশ না পারার কারণ নেই। তারপরও ক্রিকেট অনিশ্চয়তার বলে শঙ্কা ছিল। তবে চার হাফ সেঞ্চুরিতে স্কটিশদের হতাশা উপহার দেয়ার কাজটা দক্ষভাবে সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ। নেলসনে বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডকে ৬ উইকেটে পরাজিত করেছে মাশরাফির দল। এবার বিশ্বকাপে এটি টাইগারদের দ্বিতীয় জয়। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।

প্রথমে ব্যাট করে কাইল কোয়েটজারের সেঞ্চুরিতে স্কটল্যান্ড ৮ উইকেটে ৩১৮ রান করেছে। জবাবে তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক ও সাকিবের হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৮.১ ওভারে ৪ উইকেটে ৩২২ রান করে বাংলাদেশ। ১১ বল হাতে রেখেই আসে দাপুটে জয়। স্কটল্যান্ডের সেঞ্চুরিয়ান কাইল কোয়েটজার ম্যাচ সেরা হন।

এই জয়ে অবশ্য বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়নি। পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও রান রেটে কিছুটা পিছিয়ে বাংলাদেশ। স্কটিশদের হারালেও টাইগারদের জন্য শেষ আটে যাওয়ার জন্য শেষ দুই ম্যাচের একটি জিততেই হবে। আর বাংলাদেশের খেলা বাকি আছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক ফর্ম হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে হারানো কঠিন কর্মই বটে। একই দিক বিবেচনায় শেষ আটে যেতে মাশরাফিরা টার্গেট করতেই চাইবেন নড়বড়ে ইংল্যান্ডকে।

স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়টা প্রত্যাশিতই ছিল। এদিন বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ রানও (৩২২) করলো বাংলাদেশ। ২০১১ সালে ভারতের বিপক্ষে করা ২৮৩ রানই ছিল সর্বোচ্চ। এই জয়টাই আরও রঙিন হতে পারতো একটি সেঞ্চুরির আভায়। যা মিস করেছেন তামিম ইকবাল। ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১১ ঘুরে ২০১৫। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেঞ্চুরির অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হলো ৫ রানের জন্য। বিশ্বকাপে পঞ্চমবার খেললেও কোনো সেঞ্চুরি নেই বাংলাদেশের।

বিশ্বকাপে দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার সুযোগ নষ্ট করেন তামিম। পেশীতে টান পড়লেও তামিম খেলছিলেন বেশ সাবলীলভাবে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জস ডাভির বলে এলবির ফাঁদে পড়েন তিনি। তার আগে খেলেন ১০০ বলে ৯৫ রান (৯ চার, ১ ছয়) রানের ইনিংস। তবে তামিম এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের মালিক। এর আগে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এছাড়া ওয়ানডেতে দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে চার হাজার পূর্ণ করেছেন তামিম।

৩১৮ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। ফিল্ডিং করতে গিয়ে ডান কাঁধে ব্যথা পেয়ে ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতে আসেননি এনামুল হক বিজয়। হাসপাতালেও যেতে হয়েছে তাকে। পরে তিনি ব্যাটিং করবেন না সেই ঘোষণাও এসেছিল। বিজয়ের পরিবর্তে তামিমের সঙ্গী হওয়া সৌম্য সরকার দলীয় ৫ রানেই ডাভির শিকার হন।

দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা ১৩৯ রান যোগ করেন। এটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ১১৪ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব-মুশফিক গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। ১২তম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে নিজের উইকেট বিলিয়ে এসেছেন মাহমুদউল্লাহ। অযথাই ডাউন দ্য উইকেট খেলতে গিয়ে বল তার পায়ে লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। তিনি ৬২ বলে ৬২ রান (৬ চার, ১ ছয়) করেন।

মুশফিক-তামিমের তৃতীয় উইকেট জুটিও ৫৫ রান যোগ করেছিল। তামিম আউট হলে ভাঙে সেই জুটি। মুশফিক-সাকিবের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৪৬ রান। ঝড়ো গতিতে হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হন মুশফিক। ২০তম হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি ৩৮ বলে। ইভান্সের শিকার হওয়ার আগে করেন ৪২ বলে ৬০ রান (৬ চার, ২ ছয়)। এরপর আর উইকেট হারানোর কষ্টে পুড়তে হয়নি বাংলাদেশকে।

সাকিব-সাব্বিরের পঞ্চম উইকেট জুটি নির্বিঘ্নেই বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। ১০.১ ওভারে ৭৫ রানের জুটি গড়েন তারা। রান বলের সমীকরণ উতরে গেছে বাংলাদেশ সাব্বির ব্যাটে চড়ে। চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করার সঙ্গে সাকিব পেয়ে যান ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি। ৪১ বলে ৫২ রান (৫ চার, ১ ছয়) করে অপরাজিত ছিলেন সাকিব। সাব্বির ৪০ বলে অপরাজিত ৪২ রান (৪ চার, ২ ছয়) করেন। স্কটল্যান্ডের ডাভি ২টি উইকেট নেন।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা স্কটল্যান্ডকে শুরুর ধাক্কাটা দেন মাশরাফি। ম্যাকলেওড (১১) ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহর হাতে। দশম ওভারে তাসকিন ফেরান গার্ডিনারকে (১৯)। তৃতীয় উইকেটে কোয়েটজারের সঙ্গে ৭৮ রানের জুটি গড়েন মাচান। ৩৫ রান করে মাচান সাব্বিরের শিকার হন। অধিনায়ক প্রেস্টন মমসেনকে নিয়ে দলকে বড় রানের ভিত গড়ে দেন কোয়েটজার। তারা দুজন ১৪১ রানের জুটি গড়েন।

তিনশো রানটা তখনই হাতের নাগালে চলে আসে স্কটিশদের। মাশরাফি, সাকিব, তাসকিন, রুবেলরা ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন নাসির হোসেন। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে দলীয় ২৫৭ রানে নাসিরের বলে মমসেন ক্যাচ দেন সাকিবের হাতে। তিনি ৩৯ রান করেন।

মমসেন ফিরলেও বাংলাদেশকে পোড়াচ্ছিল কোয়েটজারের ব্যাট। আইসিসি সহযোগী দেশগুলোর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। ৫৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা কোয়েটজার ১০৩ বলেই পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। যা বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত এই স্কটিশ ওপেনারকে আউট করতে পেরেছে বাংলাদেশ। নাসিরের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার আগে ১৩৪ বলে ১৭টি চার ও ৪টি ছয়ে ১৫৬ রানের ইনিংস খেলেন।

শেষ দিকে বেরিংটনের ২৬, ক্রসের ২০ রানে তিনশো পার হয় স্কটল্যান্ড। ৪৯তম ওভারে বেরিংটন, ক্রস তাসকিনের শিকার হন। শেষ ওভারে সাকিবও পেয়ে যান উইকেটের দেখা। মাজিদ হক ধরা পড়েন সৌম্যর হাতে। চারটি ক্যাচ এদিন তালুবন্দি করেন সৌম্য। তাসকিন ৪৩ রানে ৩টি, নাসির ২টি, মাশরাফি, সাকিব, সাব্বির ১টি করে উইকেট পান।