বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের সুপারিশ

SHARE

image_80388_0ধানের বীজ আমদানি-রফতানির জন্য বাংলাদেশ ও ভারতকে নিজেদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে হবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে। এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়- দুই দেশের কৃষকরা বর্তমানে অবৈধ উপায়ে ধানের বীজ কেনা-বেচা ও আনা-নেয়ার জন্য যেভাবে সীমান্ত ব্যবহার করছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে তা বন্ধ হয়ে যাবে।

কাটস্‌ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি নামের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়, “ধানের বীজ আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রায় অবহেলিত বলেই বলা যায়। সীমান্তে উচ্চ ফলনশীল জাতের বিভিন্ন ধানের বীজ (এইচওয়াইভি) নিয়ে বেশ কয়েকবার কিছু অনানুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও এই পণ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যের বিষয়টির অনুপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।”

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে ধানের বীজের সহজলভ্যতা এবং বৈধভাবে প্রবেশ- দুইই তাৎপর্যপূর্ণভাবে নিশ্চিত করা যেতে পারে।

বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের বা এইচওয়াইভি ধানের বীজ শুধু পরীক্ষামূলকভাবে আদান-প্রদানের সুযোগ রয়েছে এবং এক্ষেত্রে আমদানির পরিমাণও অত্যন্ত সীমিত। ধানের বীজসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইন, নীতি, বিধিমালা ও মানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের পাশাপাশি মেধাসম্পদ অধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলোই দুই দেশের বাণিজ্যের মধ্যে মূল প্রতিবন্ধকতা।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, “সঠিক সময়ে এইচওয়াইভি ধানের বীজের প্রবেশাধিকার ও সহজলভ্যতার বিষয়টি নিয়ে কোনো না কোনো বাধা থেকেই যাচ্ছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী প্রচুর পরিমাণ এইচওয়াইভি ধানের বীজ পেতে হলে অবৈধ পথই বেছে নিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।”

ভারতে জনপ্রিয় কিছু বাংলাদেশী উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান হলো বিআর-১১, বিআরআরআই ধান-২৮ এবং বিআরআরআই ধান-২৯। আর বাংলাদেশে জনপ্রিয় ভারতের কিছু উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান হলো স্বর্ণ (গুটি এবং সাদাসহ), পারিজাত, সমসর, স্বাম্পা এবং মামুম ইত্যাদি।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়- সনদপ্রাপ্ত স্বর্ণা এবং মিনিকেট জাতের ভারতীয় ধানের বীজ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে চোরাই বাজারে বিক্রি হয়, যেখানে ভারত থেকে যদি এই বীজ বাংলাদেশ কিনে নিত তাহলে অর্ধেক দামে অর্থাৎ প্রতি কেজি মাত্র ৩০ টাকা দরেই কিনে নিতে পারতেন বাংলাদেশী কৃষকরা।

গবেষণার সময়ে দেখা গেছে, এইচওয়াইভি ধানের বীজের যোগান দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত- দুই দেশের সরকারপর্যায়ে কর্তৃত্বপূর্ণ মনোভাব এবং সরকারি সংস্থাগুলোর অকার্যকর নীতির কারণেই মোট চাহিদার তুলনায় যোগানের পরিমাণ হয় খুবই কম। ফলে কৃষকরা হয় আগের জমানো বীজ ব্যবহার করেন নতুবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধ বীজের চালান কিনতে বাধ্য হন।

এইচওয়াইভি ধানের বীজের সহজলভ্য ও বৈধ যোগানের নিশ্চিত করতে দুই দেশকেই এইচওয়াইভি ধানের বীজ চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয় গবেষণায় যেন এর ফলাফল উভয় দেশেই গ্রহণযোগ্য হয়। যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতির ধান ব্যবহারোপযোগী বলে মনে করা হয় তাহলে দুই দেশেই সেটি বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেয়ার জন্যও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

এছাড়াও দুই দেশের সংশ্লিষ্ট গবেষণা কার্যক্রম, বীজসংক্রান্ত নীতি ও বিধিমালার সমন্বয় থাকা দরকার বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনটিতে।