‘আফগানিস্তানের প্রভাব কাশ্মীরেও পড়তে পারে’

SHARE

যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতির প্রভাব ভারত নিয়ন্ত্রিত ভূস্বর্গ খ্যাত উপত্যকা জম্মু-কাশ্মীরেও পড়তে পারে। শনিবার (২৩ অক্টোবর) এমন মন্তব্য করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ভারতের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাওয়াত। তিনি বলছেন, আফগানিস্তানে যা হচ্ছে, তার প্রভাব জম্মু-কাশ্মীরেও পড়তে পারে। আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের গোয়াহাটিতে একটি অনুষ্ঠানে দেশটির সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, আফগানিস্তানে কী হচ্ছে, তা সবারই জানা। এর প্রভাব জম্মু-কাশ্মীরের ওপরও পড়তে পারে। আমাদের এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সীমান্তগুলো বন্ধ করা এবং কড়া নজরদারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাইরে থেকে কে বা কারা আসছে, তার ওপর কড়া নজর রাখতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা চালাতে হবে।

নিরাপত্তার কড়াকড়ির বোঝা সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের বহন করতে উল্লেখ করে বিপিন রাওয়াত অনুরোধ করেন, সকলে যেন এই বিষয়টি বোঝেন যে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থেই এই কঠোর ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়েও সাধারণ নাগরিকদের অবগত হওয়া উচিৎ বলেও তার দাবি।

ভারতীয় এই চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ মনে করেন, কেউ আমাদের নিরাপত্তা দিতে আসবে না, আমাদের নিজেদেরই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, নিজেদের মানুষদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং দেশকে সুরক্ষা দিতে আমার মনে হয় সকলকেই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে অবগত করা উচিৎ।

তার মতে, যদি এই অঞ্চল বা দেশের যে কোনো প্রান্তে বসবাসকারী মানুষ দেশের প্রতি নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে জানতে পারেন, তবে আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারব।

দেশের সকল নাগরিককে নিজের কর্তব্য পালনের আহ্বান জানিয়ে জেনারেল বিপিন বলেছেন, প্রত্যেকে যদি নিজের দায়িত্ব পালন করেন, তবে এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব। আপনাদের এলাকায় অনেকেই এসে থাকছেন, তারা কারা বা কোথা থেকে এসেছেন, সে বিষয়ে জানা উচিৎ আপনাদের। আমরা যদি সতর্ক থাকি, তবে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সন্ত্রাসী আমাদের এলাকায় আশ্রয় নিতে পারবে না। দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে যে যদি কারোর মনে সন্দেহ জাগে, তবে প্রশ্ন করা এবং স্থানীয় পুলিশকে এই বিষয়ে জানানো।

বিশ্লেষকদের মতে, এর আগেও আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই তিনি বলেছিলেন, শুধুমাত্র সময়ই বলবে এরপর আফগানিস্তানের কী হবে। কট্টর ইসলামিক সংগঠন তালেবান এতো দ্রুত আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে নেবে তা আসলে আমাদের কারও কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না। পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকেই যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

জেনারেল রাওয়াত সেই সময়ে উল্লেখ করেছিলেন, ভারত-বিরোধী আগ্রাসী নীতি নিয়ে চীন ও পাকিস্তান যে পেছন থেকে তালেবানদের সহায়তা করছে, তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট এবং আরও বেশকিছু দেশ এই উস্কানির পেছনে জড়িত রয়েছে। এর জন্য সামরিকভাবে ভারতকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে বলেই সেসময় দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ভারতের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার অবসরের একদিন আগেই এই পদের জন্য রাওয়াতের নাম ঘোষণা করে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিশ্লেষকদের মতে, সিডিএস পদের মাধ্যমে কার্যত তিনি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর তিন বাহিনীর কাজে সমন্বয়ের দায়িত্বপালন করছেন। যদিও নিরাপত্তা বাহিনীকে তিনি কোনো নির্দেশ দিতে পারবেন না।

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অবসরের বয়স ৬২ বছর। কিন্তু চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের অবসরের বয়স ৬৫ বছর। সেই হিসেব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চে সিডিএসের দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে বিপিন রাওয়াতের।